তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা বিস্তারিত জেনে নেই

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে তুলসী পাতার উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু তুলসী পাতা খাওয়ার ফলে কোন কোন বিষয়গুলো উপকার পেয়ে থাকি তা হয়তোবা আমরা অনেকেই জানিনা। প্রাচীনকাল থেকেই এটি ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।
তুলসী পাতার উপকারিতা
তুলসী পাতায় এমন কিছু আন্টি উপাদান রয়েছে, যা খাওয়ার ফলে আমাদের দেহের মারাত্মক সব রোগ, যেমন- ক্যান্সার, ডায়াবেটিক, হৃদরোগ ইত্যাদি রোগ অতি অল্প সময়ে ভালো হয়ে যায়। তুলসী পাতা খেলে যেমন উপকার হয়, তেমনি এটি অধিক মাত্রায় খেলে ক্ষতির সম্মুখীনও হতে হয়।

ভুমিকা

Holy Basil -এর বাংলা অর্থ হচ্ছে তুলসী, যাকে আমরা মূলত ঔষধি গাছ হিসেবে চিনে থাকি। প্রাচীনকাল থেকে তুলসী গাছের পাতা আমাদের কাছে বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই গাছটিকে আমরা কম বেশি আমাদের সবার বাড়িতেই খুব যত্ন সহকারে রোপণ করে থাকি। এর বৈজ্ঞানিক নাম (অসীমাম বাসীলিকাম লিন)।
আরো পড়ুনঃখালি পেটে নিম পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
এর বাংলা অর্থ হচ্ছে তুলনা নেই। একে অনেকের সুগন্ধিযুক্ত গাছ বলে থাক। আমাদের দেশে সাধারণত চার ধরনের তুলসী গাছ দেখা যায়। যেমন- বাবুই তুলছি,রাম তুলসী,কৃষ্ণ তুলসী ও শ্বেত তুলসী।
মানব জীবনে তুলসী পাতার উপকারিতা অপরিসীম। নিচে তুলসী গাছের উপকারিতা সম্পর্কে কিছু তথ্য পেশ করলাম:

সর্দি কাশি কমাতে তুলসী পাতার উপকারিতা

আমরা সবাই জানি, আমাদের সর্দি কাশি বা ঠান্ডা লাগলে তুলসী পাতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তুলসী পাতা, আদা ও চা একসাথে ফুটিয়ে তাতে ও লেবু মিশ্রিত করে নিয়মিত পান করলে বুকের কফ জমা ভালো হয়। এছাড়া তুলসীর পাতা গুড়া করে আমরা ক্যাপসুল হিসেবেও খেতে পারি।

গলা ব্যথা দূর করতে তুলসী পাতার গুরুত্ব

যাদের গলা ব্যথা বা যারা গলা ব্যথায় ভুগছেন, তাদের জন্য তুলসী পাতার কোন বিকল্প নেই। শ্বাসকষ্টের ক্ষেত্রে তুলসী পাতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তুলসী পাতা পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি নিয়মিত পান করলে এবং নিয়মিত যদি গড়গড়া করা যায় তাহলে করোনা মহামারির মতরককে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।

ক্যান্সার প্রতিরোধে তুলসী পাতার ভূমিকা

আমরা মরণঘাতি ক্যান্সারকে সবাই চিনি। যে রোগ একবার যদি কারো শরীরে বাসা বাঁধে, তার বাঁচার সম্ভাবনা খুব কম সংখ্যক থাকে। কিন্তু তুলসী পাতাতে যেসব উপাদান রয়েছে যেমন-
ফাইটোকেমিক্যাল,
মাইরেটিনাল,
এপিজেনিন
রোসমারিনিক এসিড এবং
লিউটিউলিন
এসব উপাদান ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও তুলসির পাতায় এমন এক ধরনের উপাদান থাকে যা মানুষের দেহের টিউমারের মত রোগকে নিরাময় করতে সাহায্য করে। কমবেশি অনেক মা-বোনদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের কথা শোনা যায়। ব্রেস্ট ক্যান্সার নিরাময় করতেও তুলসীপাতার কোন জুড়ি নেই।

তুলসী পাতা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

মানুষের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে তুলসী পাতার ভূমিকা অপরিসীম। তুলসী পাতা ও এলাচ পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি প্রতিদিন পান করলে অনেক ধরনের রোগ যেমন-
অ্যাজমা
ফুসফুসের সমস্যা
জ্বর ও সর্দি এবং
ব্রংকাইটিস
এর মত রোগ খুব সহজেই ভালো হয়ে যায়। এছাড়া তুলসী পাতা বাটা যেকোনো ক্ষতস্থানে লাগালে
সেই ক্ষতস্থান খুব দ্রুত শুকিয়ে যায়।
ওজন কমাতে তুলসী পাতার গুরুত্বআমরা বেশিরভাগ লোক ওজন সমস্যায় ভুগি। আমরা যদি নিয়মিত তুলসী পাতা খাই তাহলে আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণ খুব সহজেই করতে পারব, কারণ তুলসী পাতায় রয়েছে রক্তের সুগারের মাত্রা ও কোলেস্টেরল কমানোর অসীম ক্ষমতা। তুলসী পাতা বা তুলসি চা নিয়মিত খাওয়ার ফলে শরীরের রক্তকে পরিষ্কার করে এবং শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে শরীরকে পরিষ্কার করে ফেলে। এতে করে শরীরের ওজন কমে যায়। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে তুলসী পাতা খাওয়ার পরে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর হয়। এতে করে শরীরের ওজন অনেক অংশে কমে যায়।

রুপচর্চায় তুলসি পাতার গুরুত্ত

তুলসি পাতার এমন কিছু বৈষিস্ট আছে যার ফলে মানুসের ত্বকের বিভিন্ন জটিল রোগ খুব সহযেই নিরাময় করা সম্ভব।ব্রন/ব্রনের দাগ/ ব্রনের ব্যথা ইত্তাদি সারাতে তুলসি পাতার কোন জুরি নেই।নিম এবং তুলসি গাছের পাতা এক সঙ্গে বেটে নিয়ে এক চিলতে হলুদ দিয়ে মিশিয়ে ব্রন আলা ত্বকে লাগালে অতি অল্প সময়ে ব্রন ভাল হয়ে যায়। এছাড়াও আমাদের ত্বককে আরো উজ্জ্বলময় করতে তুলসী পাতা বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার করা যায়, যেমন-তুলসী পাতার গুড়ার সাথে আধা চামচ গুড়া দুধের মিশ্রণ করে ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে। তুলসী পাতার গুড়া তেলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে মাথার খুশকি দূর হয় এবং চুলো অনেক মসৃণ হয়।

ডায়াবেটিস কমানোর ক্ষেত্রে এর উপকারিতা

প্রতিদিন তুলসী পাতা খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে থাকা রক্তে সুগারের মাত্রা কমিয়ে দেয়। এটি এন্টি ডায়াবেটিক হিসেবেও কাজ করে। তুলসী পাতা আমাদের শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন করে থাকে তুলসীতে রয়েছে স্যাপোনিন,ত্রিতারপিনিন ও ফ্যাবোনয়েড যা ডায়বেটিক নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
মানব জীবনে তুলসী পাতার গুরুত্ব বা উপকারিতা যেমন অপরিসীম, তেমনি এটা অধিক মাত্রায় সেবন করায় ক্ষতির সম্ভাবনা ও অনেক গুণ বেশি। তাই তুলসী পাতা খাওয়ার অপকারিতা নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

গর্ভাবস্থা বা স্তন্যপান করানোর সময়

স্বল্প পরিমান তুলসি পাতা খেলে কোনো রকম সমস্যার সম্মুখিন হতে হয় না কিন্তু এটি অধিক পরিমান খাওয়ার ফলে বিভিন্ন সমস্যাও দেখা দিতে পারে।এমনকি আটি বেশি মাত্রাই খাওয়ার ফলে মেয়েদের সন্তান সম্ভবা হওয়ার সম্ভাবনাও অনেকাংশে কমে যায়। তাই আমাদের উচিত হবে তুলসি পাতা সব সময় স্বল্প পরিমানে খাওয়া।

রক্তপাতের সমস্যা দেখা দিতে পারে

অধিক পরিমাণ তুলসী পাতা খাওয়ার ফলে শরীরে রক্ত প্রবাহ বেড়ে যেতে পারে, যার ফলে শরীরে স্বাভাবিক রক্ত জমাট হওয়ার প্রবণতা নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে রক্তপাতের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আমাদের উচিত যে কোন সার্জারি অপারেশনের দুই সপ্তাহ পূর্ব হতে তুলসী পাতা খাওয়া বন্ধ করে দেয়া।

নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিতে পারে

তুলসি পাতায় পটাশিয়ামের পরিমান রয়েছে অনেক বেশি। তাই এটি খাওয়ার ফলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে। যাদের নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তাদের উচিত তুলসি পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকা।

পেটে জ্বালাপোড়া করে

তুলসি পাতার এমন একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা হয়তোবা আমরা অনেকেই জানিনা, আর সেটি হলো গরম প্রবাহ। তাই যদি কোন ব্যক্তি অধিক পরিমাণ তুলসী পাতা খায় তাহলে তার পেট জ্বালাপোড়া করতে পারে। তাই আমাদের উচিত অতিরিক্ত তুলসী পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকা ।

লেখকের মন্তব্য

উপরের বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ছোট বড় সকল রোগের ক্ষেত্রে তুলসী পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারলাম। আরো জানলাম যে এটি অধিক মাত্রায় খাওয়ার ফলে আমাদের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিও হতে পারে। তাই আমাদের সব সময় এটি কে বিশেষজ্ঞ বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত।
এতক্ষণ ধৈর্য্য সহকারে আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময় দিয়ে আমাদের আর্টিকেল পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা । এরকম তথ্যবহুল বা আপনার কাছে ভালোলাগা এমন সব আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন, কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন এবং শেয়ারের মাধ্যমে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url