কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিকগুলো কি কি

কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে কমবেশি ছোট বড় আমরা জানি। কারণ আমরা কমবেশি সবাই জানি মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের ওষুধ হিসেবে কালোজিরা কে সবার উপরে স্থান দেওয়া হয়ে থাকে। কালোজিরার জাদুকরি গুণাবলীর কারণে আমরা এটি কে যেকোনো ধরনের রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করে রোগ মুক্তি লাভ করে থাকি।

কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা

কালোজিরায় অনেক উপাদান রয়েছে যা খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং স্মরণশক্তি বৃদ্ধি তে এর গুরুত্ব অপরিসীম। কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক গুলি সম্পর্কে জানতে চাইলে আমাদের আর্টিকেলটি বিস্তারিত পড়ুন।

ভুমিকা

প্রাচীনকাল থেকেই কালোজিরা ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। কালোজিরাতে যেসব উপাদান রয়েছে তা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কালিজিরাতে যে সকল উপাদান রয়েছে তা হলো- প্রোটিন, ভিটামিন বি, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, আয়রন, তামা, দস্তা এর সম্পূর্ণ উৎস পাওয়া যায়।

আরো পড়ুনঃগাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা- গাজর খাওয়ার নিয়ম

কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা

আমরা সাধারণত কালোজিরা কে কালোজিরা নামে চিনে থাকলেও স্থান ভেধে এর বিভিন্ন নাম রয়েছে, যেমন-কালো কেওড়া, রোমান ধনে, নিজেলা, ফিনেল ফ্লাওয়ার ইত্যাদি। "নিজেলা সাটিভা" হচ্ছে কালোজিরার বৈজ্ঞানিক নাম। নাম যাই হোক না কেন কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা অপরিসীম।

স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে কালোজিরা উপকারিতা

নিয়মিত কালোজিরা খাওয়ার ফলে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়। কমলার রস বা এক কাপ চায়ের সাথে এক চামচ কালিজিরা তেল মিশিয়ে দিনে তিনবার সেবন করলে মাথা থেকে দুশ্চিন্তা দূর হয়, তাছাড়া কালো জিরা মেধা বিকাশের সহযোগিতা করে। নিয়মিত কালো জিরা খেলে মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এতে করে মানুষের স্মরণশক্তি তীব্র হয়।

সর্দিকাশি দূর করতে কালোজিরার উপকারিতা

এক চামচ কালোজিরা সঙ্গে তিন চামচ মধু এবং দুই চামচ তুলসী পাতার রস মিশিয়ে খেলে সর্দিকাশি সম্পূর্ণরূপে ভালো হয়ে যায়। একই সঙ্গে একটি শুকনা কাপুরের কালোজিরা বেঁধে শুকতে থাকলে সর্দি তরল হয়ে ঝরে যায়। এছাড়া দ্রুত সর্দিকাশি থেকে মুক্তি পেতে চাইলে কালোজিরা তেল বুকে ও পিঠে নিয়মিত মালিশ করুন দেখবেন খুব তাড়াতাড়ি আরও গোলাপ করবেন।

ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে কালো জিরার গুরুত্ব

কোন ব্যক্তি যদি নিয়মিত তার শরীরে কালোজিরার তেল মালিশ করে সূর্যের তাপে কমপক্ষে আধাঘন্টা বসে থাকে এবং এক চামচ কালোজিরা তেল তার সাথে সমপরিমাণ মধু সহ প্রতি সাত দিনে দুই থেকে তিনবার সেবন করে তাহলে তার ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। এছাড়া কালোজিরার তেল রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং নিম্ন রক্তচাপ বৃদ্ধি করে ও উচ্চ রক্তচাপকে হ্রাস করে।

শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগ সারাতে কালোজিরার উপকারিতা

যদি কোন ব্যক্তি প্রতিদিন নিয়ম করে কালো জিরার ভর্তা খাবারের সাথে খায়, তাহলে তার শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগ ভালো হয়ে যায়। এক্ষেত্রে এক কাপ চা চামচ কালোজিরার তেল, এক কাপ দুধ বা চায়ের সাথে মিশিয়ে দৈনিক তিনবার নিয়মিত খেতে হবে।

ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে কালোজিরার উপকারিতা

প্রতিদিন নিয়ম করে কালোজিরা খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিক রোগ দ্রুত উপশম হয়। অল্প পরিমাণ কালোজিরা এক গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করলে, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। যদি কোন ব্যক্তি এক চামচ কালোজিরার তেল গরম ভাতের সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন দুইবার সেবন করবে তাহলে তার ডায়াবেটিক খুব দ্রুত নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

প্রতিদিন কি পরিমান কালোজিরা খাওয়া উচিত

আমরা জানি এক চিমটি পরিমাণ কালোজিরা এক গ্লাস মানির সাথে প্রতিদিন খালি পেটে পান করলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়া প্রতিদিন নিয়ম করে কালোজিরা খেলে নারী ও পুরুষ উভয়েরই যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং যৌন সমস্যা প্রতিরোধ করে।

দ্রুত ওজন কমাতে কালোজিরার খাওয়ার উপকারিতা

কালোজিরা হচ্ছে একটি উচ্চ আঁশ সমৃদ্ধ খাবার। কালোজিরা খাবারের সাথে মিশিয়ে খেলে আপনাকে দীর্ঘক্ষণ তৃপ্ত রাখতে পারবে। অর্থাৎ মস্তিষ্ক তৃপ্ত রাখার অন্যতম কৌশল হল খাবারের সাথে কালোজিরা মেশা। এছাড়া আমরা জানি খাবারে কালোজিরা মিশালে সেই খাবারের পুষ্টিগুণ অনেক বেড়ে যায়। তাই এক কথায় বলা যায় দ্রুত ওজন কমাতে কালোজিরা খাওয়ার গুরুত্ব অপরিস।

 রিউমেটিক এবং পিঠে ব্যথা দূর করার জন্য

কালোজিরা তেল আমাদের দেহের দীর্ঘমেয়াদি রিউমেটিক সারাতে সাহায্য করে। এর তেল পিঠে ব্যথা উপশম করতেও খুব উপযোগী। এছাড়া কালোজিরা খেলেও খুব উপকার পাওয়া যায়।

শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি করতে কালোজিরা

দুই বছরও এর অধিক বয়সী শিশুদের নিয়মিত কালোজিরা খাওয়ালে শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ঘটে। শিশুর স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও কালোজিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের কালোজিরা তেল শরীরে ব্যবহার করলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।

চোখের ব্যথা দূর করতে

ঘুমানোর আগে চোখের উভয় পাশে এবং ভুরুতে কালোজিরা তেল মালিশ করলে চোখের ব্যথা দূর হয়ে। গাজরের তেল এবং কালোজিরার তেল একসাথে মিক্সড করে যায় নিয়মিত এক মাস খেলে চোখের অনেক উপকার সাধিত হয়। নিয়মিত গাজর খেয়ে এবং কালোজিরা টিংচার সেবন করে এবং তেল মালিশ করে আমরা আমাদের চোখকে ভালো রাখতে পারি।

বিভিন্ন প্রকার চর্মরোগ সারাতে

আক্রান্ত জায়গা ধুয়ে পরিষ্কার করে সেখানে কালোজিরা তেল মালিশ করলে চর্মরোগ ভালো হয়। এক চা চামচ কালোজিরা তেল এবং সমপরিমাণ কাঁচা হলুদের রস সেবনেও চর্মরোগ ভালো হয়। এক কাপ রং চায়ের সাথে এক চা চামচ কালোজিরার তেল এবং সমপরিমাণ মধু দৈনিক তিনবার করে দুই থেকে তিন সপ্তাহ সেবনে চর্মরোগ ভালো হয়।

জৈব শক্তি বৃদ্ধির জন্য

নারী-পুরুষ উভয়ের যৌন ক্ষমতা বাড়াতে কালোজিরা সহায় ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত কালোজিরা খেলে পুরুষ তার পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তি পায়। কালোজিরা যৌন ক্ষমতা বাড়াতে এবং পুরুষের পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে বলে মধ্যপ্রাচ্যে প্রচলিত আছে। এক চা চামচ মাখন, এক চা চামচ জাইতুন তেল সমপরিমাণ কালোজিরা তেল এবং মধু চার থেকে পাঁচ সপ্তাহ দৈনিক তিনবার সেবন করলে স্বাস্থ্যের অনেক উন্নতি সাধিত হয়।

দুগ্ধ দানকারিনী মাদের দুধ বৃদ্ধির জন্য

কালোজিরা খেলে মায়ের বুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ আসে। ৫ থেকে ১০ গ্রাম কালোজিরা মিহি করে দুধের সাথে মিক্সড করে প্রতি রাতে শোয়ার আগে খেলে মাত্র ১০ থেকে ১৫ দিনে দুধের প্রবাহ বেড়ে যাবে। এছাড়া যেসব মায়ের বুকে দুধ নেই, তারা কালোজিরা ভর্তা করে ভাতের সঙ্গে খেলে উপকার পাবেন। এছাড়া এক চা চামচ মধু এবং সমপরিমাণ কালোজিরা তেল দৈনিক তিনবার করে নিয়মিত সেবনে মায়ের বুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ আসে।

ত্বকের তারণ্য ধরে রাখতে

ত্বকের প্রভা বৃদ্ধি এবং ত্বকের গঠনের উন্নতি সাধনে কালোজিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কালোজিরার লিনোলেইক ও লিনোলেনিক নামের এসেনসিয়াল ফ্যাটি এসিড পরিবেশের প্রখরতা, স্ট্রেস থেকে ত্বককে রক্ষা করে। কালোজিরা এবং মধুর পেস্ট বানিয়ে আধা ঘন্টা বা এক ঘন্টা ত্বকে লাগিয়ে এরপর ধুয়ে ফেললে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। আপেল সাইডার ভিনেগার এর সাথে কালোজিরা মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ত্বকে লাগালে ব্রণের সমস্যা দূর হয়। কালোজিরার গুড়া ও কালোজিরা তেল শুষ্ক ত্বকের জন্য বেশ উপকারী।

হজমের সমস্যা দূরীকরণে

এক বা দুই চা চামচ কালোজিরা বেটে পানির সঙ্গে খেলে হজমের সমস্যা দূর হয়। এভাবে প্রতিদিন ২-৩ বার খেলে এক মাসের মধ্যে হজম শক্তিও বেড়ে যাবে। এতে পেট ফাঁপা ভাব ও দূর হয়।

কালোজিরা খাওয়ার ক্ষতিকর দিকগুলো

সাধারণত কালোজিরা সেবনে উপকারিতা বেশি তবে এর কিছু ক্ষতিকর দিক ও রয়েছে। কালো জিরার ক্ষতিকর দিকগুলো নিচে দেওয়া হলঃ

অতিরিক্ত পরিমাণ কালোজিরা তেল সে বনের পেটে ব্যথা অনুভূত হয়। 

কালো জিরার থাইমোকুইনন উপাদান রক্ত জমাট বাধার গতি কমিয়ে দেয়। তাই অতিরিক্ত কালোজিরা সেবনকারী ব্যাক্তি কোন জায়গায় আঘাত পেয়ে রক্ত বের হলে তার রক্ত জমাট বাধতে অনেক দেরি হয়।

অতিরিক্ত কালোজিরা সেবনের ফলে তোকে সৌন্দর্য নষ্ট হয়। তারা তিন মাসের অধিক সময় ধরে কালোজিরা সেবন করে তাদের পাকস্থলী সংকুচিত হয়। বুক জ্বালাপোড়া, বমি বমি ভাব এগুলো কালোজিরা অতিরিক্ত সেবনের কারণে হয়ে থাকে। এছাড়া গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত কালোজিরা খেলে গর্ভের সন্তানের অকাল মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে।

লেখকের মন্তব্য

উপরের বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের ঔষধ হিসেবে আমরা কালোজিরা কে ব্যবহার করে থাকি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা বা গুরুত্ব যেমন অপরিসীম, তেমনি এর কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। তাই আমাদের উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কালোজিরা খাওয়া।

এতক্ষণ ধরে আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। এরকম তথ্যবহুল বা আপনার কাছে ভালোলাগা আরো অনেক পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েব সাইটটি ভিজিট করুন ও কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন এবং শেয়ারের মাধ্যমে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url