চোখের সমস্যা ও সমাধানের উপায় গুলো যেনে নিই

চোখের সমস্যা মানুষের নিত্য দিনের সঙ্গী। চোখ মানুষের দেওয়া আল্লাহর এক বড় নিয়ামত। চোখ দিয়ে মানুষ আল্লাহর সৃষ্টির এই সুন্দর পৃথিবীকে দেখতে পায়। চোখ ছাড়া মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সবকিছুই অচল। আল্লাহ তাআলা মানুষকে দুই ধরনের চোখ দিয়েছেন এদের একটি হচ্ছে বাহ্যিক চোখ অন্যটি হচ্ছে আভ্যন্তরীণ চোখ।

চোখর সমস্যা

বাহ্যিক চোখ বলতে আমরা মূলত বোঝাতে চাচ্ছি সে চোখ দিয়ে আমরা সব কিছু দেখি আর আভ্যন্তরের চোখ হচ্ছে মানুষের ভালো-মন্দ বিচার বিবেচনা করার চোখ। আল্লাহর নেয়ামত এই চোখ দুটি শুধু যে মানুষকে সবকিছু দেখতে সাহায্য করে তা নয় এটি মানুষের সৌন্দর্যের ও প্রতীক। চোখে হিন জীবন মূল্যহীন জীবন।

ভূমিকা

চোখ খুব সেন্সিটিভ একটা জায়গা। বিভিন্ন কারণে চোখের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। অযত্ন এবং অবহেলা করে মানুষ চোখকে মূল্যায়ন করে না ফলে চোখের বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। চোখ ছাড়া যেহেতু মানুষের পুরো জীবনটাই অচল সে তো মানুষকে চোখের ব্যাপারে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। কোন অবস্থাতেই চোখের অযত্ন করা যাবে না।

আরো পড়ু

নিচে বিভিন্ন রকমের চোখের সমস্যা এবং এর সমাধানের উপায় গুলো দেওয়া হল

চোখের সমস্যা বোঝার উপায়

চোখের সমস্যা সাধারণভাবে বোঝা যায় চোখের দৃষ্টি শক্তি কমে গেলে। এছাড়া চোখে ময়লা পড়া , চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখ লাল হওয়া, চোখ ফুলে যাওয়া , চোখ চুলকানো, চোখ খসখস করা ইত্যাদি চোখের সমস্যা দেখা যায়।

চোখের সমস্যা থেকে যে সব সমস্যা হতে পারে

চোখের সমস্যা থেকে চোখের যেসব রোগ দেখা যায় তা হল;

গ্লুকমা, ছানি ডায়াবেটিক রেটিনা ক্ষয়, রেটিনার বিচ্যুতি, মাকুলার এডিমা, আঘাত মূলক ছানি, রেটিনো প্যাথি ইত্যাদি।

চোখের সমস্যা সমাধানে ভিটামিনের অবদান

ভিটামিন এ; চোখের জন্য যেসব ভিটামিন খুব গুরুত্বপূর্ণ তার মধ্যে ভিটামিন এ অন্যতম। এ কে রেটিনলও বলা হয়। ভিটামিন এ চোখের আর্দ্রতা বজায় রাখতে এবং কর্নিয়ার পৃষ্ঠকে রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চোখের আলোর পরিবর্তনগুলিকে সামঞ্জস্য করতে ভিটামিন এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রেটিনাকে অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে ভিটামিন এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে ভিটামিন এ এর জুড়ি নেই।

ভিটামিন এ এর অভাব হলে রাতকানা রোগ হয়। চোখের এই রোগ প্রতিরোধ করতে আমাদের ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া জরুরী। ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে সবজি, ব্রোকলি, পালং শাক ,শাক, হলুদ শাকসবজি, বেল মরিচ এবং কুমড়া। এছাড়াও ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে ডিম এবং কড লিভার তেল।

ভিটামিন বি; ভিটামিন বি১, বি ্‌২, বি৩, বি৬ এবং বি১২ এই ভিটামিন গুলি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে যা চোখের অক্সিডেটিভ স্টেজ কমায় এবং চোখকে ফ্রি ফ্রি রেডিক্যাল ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এছাড়া ভিটামিন বি কর্নিয়া এবং রেটিনার প্রদাহ এবং অবক্ষয় কারী পরিবর্তনের বিরুদ্ধে রক্ষা করে। গোলকমার বিরুদ্ধে ভিটামিন বি চোখকে সুরক্ষা দেয়।

ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে শাকসবজি ,দুধ, দ্‌ই, সূর্যমুখী ফুলের বীজ ইত্যাদি। 

ভিটামিন সি; ভিটামিন সি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা চোখকে ক্ষতিকারক ফ্রী রেডিকেলের হাত থেকে রক্ষা করে। কর্নিয়ার ক্ষত নিরাময়ের জন্য ভিটামিন সি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বয়স সম্পর্কিত অবক্ষয় এবং চোখের ছানির ঝুঁকি কমাতে ভিটামিন সি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কমলা , আঙ্গুর , তরমুজ, আনার্‌স, পেঁপে, স্ট্রবেরি ব্লুবেরি , আম , ব্লু বেরি ,কিউই এসব জাতের ফলের মধ্যে ভিটামিন সি রয়েছে। এছাড়া সবুজ এবং লাল মরিচ , ব্রুকলি , ফুলকপি , পালং শাক , মিষ্টি আলু , বাঁধাকপি , শালগম ,শাক এবং টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে।

ভিটামিন ডি; চোখের সমস্যা সমাধানে ভিটামিন ডি অনেক উপকারী। ভিটামিন ডি তে প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং ভিটামিন ডি চোখে শুষ্কতা ছানি গঠন এবং রেটিনাল অবক্ষয় থেকে চোখকে রক্ষা করে।

ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে ডিমের কুসুম , গরুর দুধ , সয়া দুধ , কড লিভার অয়েল এবং শ্যামন ইত্যাদি

ভিটামিন ই; ভিটামিন ই একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা চোখকে মুক্ত রেডিক্যাল ক্ষতির বিরুদ্ধে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এবং চোখের ছানি গঠন এবং রেডিনাল অবক্ষয়কে রক্ষা করে।

ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে এভোক্যাডো , শাক , বাদাম , সূর্যমুখী এবং সয়াবিন তেল।

চোখ লাল হওয়ার কারণ

হঠাৎ করে চোখ লাল হয়ে যাওয়া ,চোখের এই সমস্যায় অনেকেই ভুগেন। খুব বেশি পরিমাণে চোখ লাল হলে এবং তা ঘন ঘন হলে এবং চোখ লাল হয় দীর্ঘ সময় থাকলে অবহেলা না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

বিভিন্ন কারণে চোখ লাল হয়ে থাকে যেমন; 

হাঁপানি রোগীর হাঁপানি সমস্যা বেশি হলে চোখ লাল হয়।

ধুলাবালিজনিত এলার্জির কারণে চোখ লাল হয়।

গ্লুকোমার কারণে বা চোখে প্রেসার বাড়লে চোখ লাল হয়।

কোন কিছু দিয়ে চোখে আঘাত লাগলে বা চোখে ময়লা বা পোকা জাতীয় কিছু পরলে চোখ লাল হয়।

পুরাতন কন্টাক্ট লেন্স বাদ দিয়ে নতুন কন্টাক্ট লাগালে নতুন কন্টাক্ট লেন্সের পার্শপ্রতিক্রিয়ার কারণে চোখ লাল হয়।

নিম্নমানের প্রসাধনের চোখে লাগালে বা অনেক সময় আই ড্রপের কারণেও চোখ লাল হয়।

দীর্ঘ সময় কম্পিউটারের সামনে বা মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখ লাল হয়।

চোখ লাল হলে করণীয়

চোখ লাল হলে চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে নিজে থেকেই কোন আই ড্রপ ব্যবহার করা যাবে না। চোখে অস্বস্তি হলে সরাসরি পানির ঝাপটা দেওয়া যাবে না । চোখ যদি চুলকায়, চোখ শুকনা লাগলে বা চোখ জ্বালা করলে আরাম পেতে শুকনা পরিষ্কার রুমাল পরিষ্কার পানিতে ভিজিয়ে চোখে চেপে রাখতে হবে। অনেকক্ষণ বসে কম্পিউটারে কাজ করতে হলে আধাঘন্টা পর পর বিরতি নিতে হবে। এলার্জি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। চোখ লাল হলে প্রাথমিকভাবে এন্টি অ্যালার্জিক বা লুব্রিকেটেড আই ড্রপ দেয়া হয়। প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

চোখ ডেবে যাওয়ার কারণ

চোখের সমস্যার আরো একটি সমস্যা হচ্ছে চোখ দেবে যাওয়া। বিভিন্ন কারণে চোখ ডেবে যায় তা নিচে দেওয়া হল;

চোখ দেবে যাওয়ার প্রথম এবং প্রধান কারণ হচ্ছে ধূমপান। ধূমপাইয়ি ব্যক্তি বা অতিরিক্ত অ্যালকোহলে আসক্ত ব্যক্তির চোখ ডেবে যাই । এছাড়া হঠাৎ করেই কোন ব্যক্তির ওজন কমে গেলে মুখের কোষও কমে যায় ফলে ব্যক্তির চোখ ডেবে যায়। মানসিক অবসাদ এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হলে চোখ ডেবে যায়।

অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা এবং শারীরিক পরিশ্রম হলে চোখ ডেবে যায়। কোন কারনে চোখের নিচে কালি পড়লে এর যত্ন না নিলে বিশেষ করে ভিটামিনের অভাবে চোখ ডেবে যায়। 

চোখ ডেবে গেলে করণীয়

সারাদিনের ক্লান্তি এবং মানসিক চাপ দূর করার জন্য একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে দিনে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। চোখের ত্বক ঠান্ডা এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির জন্য চোখের ওপর আলু বা শসার টুকরা কেটে চেপে রাখলে ভালো হয়।

চোখের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত টি ব্যাগ ঠান্ডা করে চোখের উপর চেপে ধরে রাখতে হবে। তরমুজ শসা শাকসবজি জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খেলে শরীরের অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যায় ফলে চোখের নিচের কালচে ভাব বা ফোলা ভাব দূর হয়ে যায়।

এছাড়া চোখের সমস্যা দূরীকরণে আয়াতুল কুরসি , সূরা না্‌স, সুরা ফালাক, সূরা ইখলাস এবং কুরআন এবং হাদিসের আলোকে পাওয়া দোয়া পড়ে চোখে ফু দিতে হবে।

লেখক এর মন্তব্য

উপরিক্ত বর্ণনা থেকে আমরা জানতে পারি যে অনিয়ম ,অবহেলা এবং সুষম খাদ্য না খাওয়ার জন্য চোখের নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ধরনের চোখের সমস্যা এড়াতে আমাদের অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি জাতীয় খাবার খেতে হবে। একমাত্র পুষ্টিকর খাবারই পারে আমাদের চোখ  তথা শরীর ভালো রাখতে।

এতক্ষন ধরে আপনার মুল্যবান সময় দিয়ে আমাদের পোস্টটি পরার জন্য আপনাকে জানায় আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।এরকম তথ্যবহুল এবং আপনার কাছে ভালোলাগা পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েব সাইটটি ভিজিট করুন, কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন এবং শেয়ারের মাদ্ধমে আন্যকে পরার সুযোগ করে দিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url