ট্রান্সজেন্ডার/মুখান্নাস বর্তমান মুসলিম সমাজকে ধবংশের আকটি অন্যতম কারন

ট্রান্সজেন্ডার আসলে কী এবং ট্রানজেন্ডার বলতে যা বোঝায় সেটি হল,যদি কেউ জন্মসূত্রে যে লিঙ্গ পেয়েছে তার পরিচয় না দিয়ে অন্য পরিচয় দেয় তাহলে তাকে ট্রান্সজেন্ডার বলে। এছাড়া কোন ব্যক্তির আচরণ ও প্রত্যাশা এবং বাহ্যিক প্রকাশের উপর নির্ধারণ হয় তার জেন্ডার।

ট্রান্সজেন্ডার/মুখান্নাস

ট্রানজেন্ডার হওয়া অর্থাৎ লিঙ্গ পরিবর্তন করা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম। কারণ কোন নারীর জন্য পুরুষের বেশ ধারণ করা বা পুরুষের জন্য নারীর বেশ ধারণ করা হারাম বা কবিরা গুনাহ। বর্তমান মুসলিম সমাজকে ধ্বংসের একটি অন্যতম কারণ হিসেবে ট্রানজেন্ডার বা মুখান্নাস এর ভূমিকা নিচে বর্ণনা করা হলো।

ভূমিকা

সম্মানিত দিনি ভাই ও বোনেরা, ইসলামি শরিওতবিরধী এই কাজকে "ভালো বিষয়হিসেবে আমাদের সন্তান্দের পাঠ্যপুস্তকে ঢুকানো হয়েছে। বাংলাদেশের জাতিয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ২০২৪ সালের জন্য নির্ধারিত সপ্তম শ্রেণীর একটি পাঠ্যবই -ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

ট্রান্সজেন্ডার এর বিশেষণ ও উদ্দেশ্য

ইংরেজি শব্দ ট্রান্স এবং জেন্ডার এর সংমিশ্রণে ট্রান্সজেন্ডার শব্দটি গঠিত হয়।জেন্ডার মানে লিঙ্গ এবং ট্রান্স মানে পরিবর্তন করা। ট্রান্সজেন্ডার বলতে একজন পূর্ণাঙ্গ পুরুষ বা নারীকে বোঝায় যারা আল্লাহর এই সৃষ্টিতে সম্পূর্ণ রূপে অসন্তুষ্ট। তারা তাদের জন্মগত এই লিঙ্গ পরিবর্তন করে আল্লাহর সিদ্ধান্তকে অস্বীকার করে পুরুষ থেকে নারী বা নারী থেকে পুরুষ হতে চাই।

ট্রান্সজেন্ডার বাদ এর উত্থানের পেছনে যে বিষয়গুলো উঠে আসে তা নিচে দেওয়া হল

পাশ্চাত্যের নারীবাদী আন্দোলনের তৃতীয় ধারা যা নারী ও পুরুষের ধারণাকে আক্রমণ করেছে।

আমেরিকার সমকামী অধিকার আন্দোলন যার মাধ্যমে বিকৃত যৌনতা এবং সমকামী বিয়ে বৈধতা পেয়েছে।

ষাটের দশকে আমেরিকার যৌন বিপ্লব যা যৌনতার ব্যাপারে সব মূল্যবোধ মুছে ফেলেছে।

এগুলোর মিশ্রণে তৈরি হওয়া জেন্ডার আইডেন্টিটি মতবাদ।

চিকিৎসা শাস্ত্র, চিকিৎসক ও ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রির একটি অংশ।

ইসলামে ট্রান্সজেন্ডার মতবাদের বিধান

ট্রান্সজেন্ডার হওয়া অর্থাৎ লিজ্ঞ পরিবর্তন করা হারাম। কারন নারীর জন্য পুরুসের বেস ধারন করা ও পুরুষের জন্য নারীর বেস ধারন করা হারাম ও কবিরা গুনহ। কোনো ব্যাক্তি যদি এই সুস্পষ্ট হারাম কে হালাল মনে করে,তাহলে সে আর ইসলামের গন্ডির মধ্যে থাকবে না।

ট্রান্সজেন্ডার ও হিজরার পার্থক্য

আমাদের সমাজে হিজরা জনগোষ্ঠীর মানুষ দেখা যায়। হিজড়াদের সম্পর্কে মানুষের ধারণা রয়েছে। মানুষ মনে করে হিজড়াদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনের নাম ট্রান্সজেন্ডার। এটা মানুষের একটা মারাত্মক ভুল ধারণা। এই দুটো জিনিস একেবারেই আলাদা। মানুষকে আল্লাহ তায়ালা সম্পূর্ণ নারী অথবা সম্পূর্ণ পুরুষ হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তাআলা ডিম্বানু উৎপাদনের উৎপাদনের জন্য স্ত্রী এবং শুক্রাণু উৎপাদনের জন্য পুরুষ সৃষ্টি করেছেন। এইটা পুরো প্রজনন ব্যবস্থার বিষয় এইটা কোন বাহ্যিক যন্ত্রপাতির বিষয় নয়।

যারা জন্মগতভাবে অস্বাভাবিক এবং যৌন ত্রুটি বা জটিলতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে তাদেরকে আমরা হিজড়া বলি, ইংরেজিতে তাদেরকে বলা হয় ইন্টার সেক্স। প্রক্ষান্তরে যারা ট্রান্সজেন্ডার তারা ইন্টার সিক্স নয়, তারা সম্পূর্ণরূপে পুরুষ অথবা নারী রূপে জন্মগ্রহণ করে এবং পরে তারা লিঙ্গ পরিবর্তন করে। যারা নিজেদের ট্রান্সজেন্ডার দাবি করে তারা মূলত হিজড়া নয়, তাদের জন্ম হয়েছে সুস্থ স্বাভাবিক যৌনাঙ্গ নিয়ে। পরে তারা এর পরিবর্তন ঘটিয়েছে।

ট্রান্সজেন্ডার সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

পবিত্র কুরআনের সূরা তীন এর চার নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,আমি মানুষকে তৈরি করেছি সুন্দরতম গঠনে।আল্লাহ মানুষকে যে সুন্দর স্বাভাবিক চেহারায় সৃষ্টি করেছেন এটাই তার জন্য উৎকৃষ্ট নিয়ামত। ইসলামী শরীয়তের বাইরে একে পরিবর্তন করার অধিকার কারো নেই।

ইসলামে জঘন্যতম হারাম এবং কবিরা গুনাহ হচ্ছে লিঙ্গ পরিবর্তন।এর সাথে আপোস করার সুযোগ কারো কোনভাবেই নেই। পুরুষকে যে পুরুষালী বৈশিষ্ট্য দিয়ে এবং নারীকে যে নারীত্বের বৈশিষ্ট্য দিয়ে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন তা -ও সেভাবে ধরে রাখায় আল্লাহর বিধান। এটা এমন এক ব্যবস্থা যা না হলে মানব জীবন যথাযথভাবে চলবেনা।

ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,' রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষের বেশধারী নারী এবং নারীর বেশধারী পুরুষের উপর অভিসম্পাত করেছেন'।

সব ইসলামি আইনবিদ এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন যে, ট্রান্সজেন্ডার বা লিঙ্গ পরিবর্তন আল্লাহ সৃষ্টিতে বিকৃতি সাধন, যা সম্পূর্ণরূপে হারাম। ইমাম কুরতুবী রহমাতুল্লাহ তাফসীরে কুরতুবীতে বলেন, আল্লাহর সৃষ্টিতে কোনরূপ পরিবর্তন করা নাজায়েজ।

ট্রান্সজেন্ডার কি মানসিক রোগ?

শৈশবে বয়ঃসন্দে শুরু হওয়ার আগে লিঙ্গের অসামঞ্জস্য দেখা যায়। শিশু ভিন্ন সামাজিক লিঙ্গের পরিচয় দেয় এবং সেগুলোকে প্রাধান্য এবং নিজের লিঙ্গের পরিচয় পরিবর্তন করতে চাই। শৈশবের লিঙ্গ অসঙ্গতির অনুভূতি শিশুর মধ্যে কমপক্ষে দুই বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

ট্রান্সজেন্ডার হয় শারীরিক পরিবর্তনের কারণে পূর্বে এটিকে মানসিক স্বাস্থ্যের অন্তর্গত বলে দাবি করা হলেও গবেষণা থেকে জানা গেছে যে এর সাথে মানসিক স্বাস্থ্যের কোন সম্পর্ক নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৯ সালে এটিকে মানসিক স্বাস্থ্য থেকে বের করে যৌন শাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

ইসলামের দৃষ্টিতে নারী পুরুষের অঙ্গ বিকৃতির বিধান

রূপান্তরিত লিঙ্গ বলতে সেই সব ব্যক্তিকে বুঝায় যাদের মানসিক লিঙ্গবোধ জন্মগত লিঙ্গ চিহ্ন থেকে ভিন্ন। রূপান্তরিত লিঙ্গের ব্যক্তিরা তাদের লিঙ্গ পরিবর্তন করতে ডাক্তারি সাহায্য কামনা করে তাই তাদেরকে রূপান্তরকামী নামে ডাকা হয়।

আর তৃতীয় লিঙ্গ বলতে এমন ব্যক্তিদের বোঝায় যারা নিজে এবং সমাজের দ্বারা পুরুষ বা নারী কোনটাই হিসেবে স্বীকৃতি নয়। বাংলাদেশের হিজড়া বলতে সরকার আইনগতভাবে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃত। অন্ত লিঙ্গ ব্যক্তিদের হিজরা বলে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ক্রোমোজোমের ত্রুটির কারণে জন্মগত যৌন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হলো হিজরা যাদের জন্ম পরবর্তী লিঙ্গ নির্ধারণের জটিলতা।

অন্যদিকে ট্রান্সজেন্ডার হলো এমন সব নারী-পুরুষ যারা যারা আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিতে সন্তুষ্ট না থেকে তাদের জন্মগত লিঙ্গ পরিবর্তন করে পুরুষ থেকে নারীতে বা নারী থেকে পুরুষে রূপান্তরিত হতে চেষ্টা করে। এমন ব্যক্তিদের ব্যাপারে ইসলামের কঠোর মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে।

হিজরা জনগোষ্ঠী যারা জন্মগতভাবে অস্বাভাবিক এবং কিছু যৌন ত্রুটি বা জটিলতা নিয়ে জন্মগ্রহণ কড়াই তাদের যৌন প্রতিবন্ধী বলা হয়। সব ধরনের প্রতিবন্ধীর ব্যাপারে ইসলামে কমল মনোভাব রয়েছে।

দেহ বা অঙ্গ বিকৃতি অভিশপ্ত কাজ

যারা আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি ঘটায় হাদিসে তাদেরকে অভিসম্পাত করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন সব নারীর উপর অভিসম্পাত করেছেন, যারা অঙ্গে উলকি আঁকে অন্যদের দিয়ে উল্কি আঁকিয়ে নেয় এবং সৌন্দর্যের জন্য ভ্রুর চুল উপড়িয়ে আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে।

অন্য হাদিসে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম পুরুষের বেশধারী নারী এবং নারীর বেশধারী পুরুষের উপর অভিসম্পাত করেছেন।

অতএব আল্লাহ পুরুষকে যেসব বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলী এবং নারীকে যেসব বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলীদের সৃষ্টি করেছেন তা ধরে রাখায় আল্লাহর বিধান। এক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার বা হরমোন প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।

আল্লাহর সন্তুষ্টিকে অপ্রিয় গণ্য করার পরিণতি

মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি যাকে ইচ্ছা পুরুষ যাকে ইচ্ছা নারী হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। এখানে মানুষের ইচ্ছা অনিচ্ছার কোন বিষয় নেই। আল্লাহর সিদ্ধান্ত ফায়সালার ওপর সন্তুষ্ট থাকা প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের একান্ত কাম্য। 

আল্লাহর সিদ্ধান্তকে অপ্রিয় গণ্য করার করুন পরিনিতি পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,' যখন ফেরেশতারা তাদের মুখমণ্ডল এবং পৃষ্ঠদেশে আঘাত করতে করতে তাদের প্রাণ হরণ করবে, তখন তাদের কেমন দশা হবে'। যেসব কাজে আল্লাহর অসন্তুষ্টি জন্মায় সেসব কাজকে আল্লাহ নিষ্ফল করে দেন।

লেখকের মন্তব্য

উপরিউক্ত বর্ণনার মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম ট্রানজেন্ডার অথবা মুখোন্নাস বিষয়টি ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পূর্ণরূপে হারাম। তাই আমাদের উচিত এই ভয়ংকর ক্ষতিকারক দিক থেকে আমাদের মুসলিম সমাজকে সচেতন করে তোলা, যাতে করে আমাদের মুসলিম সমাজ ভুল পথে পা না বাড়াতে পারে।

এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময় দিয়ে আমাদের পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক অভিনন্দন। এরকম তথ্যবহুল বা আপনার কাছে ভালোলাগা এমন সব পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন, কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন এবং শেয়ার এর মাধ্যমে পোস্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url