খালি পেটে নিম পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

নিম হলো একটি ঔষধি গাছ, প্রাচীনকাল থেকে শুধু মানব জীবনে নয়, প্রাণী কুলেও নিম পাতা তৈরি ঔষধের ব্যবহার হয়ে আসছে। নিম পাতায় এমন কিছু বিশেষ উপাদান রয়েছে যার ফলে এটি আমাদের বাড়ির আশেপাশে রোপন করলে আমাদের পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখে।
খালি পেটে নিম পাতা
তাই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নিম পাতার গুরুত্ব বা উপকারিতা অপরিসীম। প্রত্যেকটা জিনিসের ভালো দিকের সাথে মন্দ দেখ থাকে অর্থাৎ উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতা ও থাকে। অতএব চলুন খালি পেটে নিম পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়।

ভূমিকা

নিম গাছ আমাদের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত অনেক বড় একটা নিয়ামত, এর পাতা থেকে আমরা যে পরিমাণ উপকার পাই, সেটা বলে শেষ করা যাবে না। এটি মূলত একটি ঔষধি গাছ। মানব জীবনে এর গুরুত্ব অপরিস। এর পাতার সাহায্যে আমাদের শারীরিক অনেক রোগ ভালো হয়।
আরো পড়ুনঃতুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা বিস্তারিত জেনে নেই
এই নিম পাতা আমাদের হজম ক্ষমতা বাড়ায়, ক্লান্তি দূর করে, ক্ষত নিরাময় করে, বমি ভাব কমায়, নিম পাতা প্রতিদিন খাওয়ার ফলে আমাদের ত্বকও ভালো থাকে। তাই প্রাচীনকাল থেকেই সারা বিশ্বে নিম পাতা ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। চলুন নিম পাতার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাকঃ

খালি পেটে নিম পাতা খাওয়ার উপকারিতা

প্রতিদিন খালি পেটে নিম পাতা খাওয়ার ফলে রক্তে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদান ধ্বংস হয়ে যায়। সাথে টক্সিক উপাদান বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয়। মানুষের শরীরকে নানা রকম রোগের হাত থেকে বাঁচাতে নিম পাতা ব্যবহারে আসছে।
কারণ এই গাছটির প্রতি অংশ, তা পাতা হোক কিংবা ডাল, এমনকি নিমফুলও নানাভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। নিয়মিত নিম পাতা খেলে শরীরের রক্ত পরিষ্কার হয়। রক্ত পরিষ্কার থাকলে শরীর ভালো থাকে।

এলার্জির ক্ষেত্রে নিম পাতার উপকার

এলার্জি একটি রোগ, যা আমরা সবাই জানি, এলার্জি যে কি ধরনের রোগ, তা শুধু মুক্ত কবিরাই বোঝে, এলার্জির কারণে আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমাদের প্রিয় খাবারগুলোকে বাদ দিয়ে ফেলি। যেমন গরুর দুধ, হাঁসের ডিম, ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ, পটি বল বেগুন কচু এমনকি সবার প্রিয় খাবার গরুর মাংস বাদ দিয়ে ফেলে।
সেজন্যই আমরা যদি নিয়মিত খালি পেটে নিম পাতা রস বা নিমপাতা গুড়া করে তা বড়ি হিসেবে খাই তাহলে এলার্জি থেকে মুক্তি পাব ইনশাআল্লাহ।

ওজন কমানোর ক্ষেত্রে নিম পাতার উপকার

নিমের ফুল ওজন কমাতে অসাধারণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এটি শরীরের অতিরিক্ত চর্বি দূর করে। তলপেটের চর্বি কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। এক মুঠ নিম ফুলের গুড়ার সাথে এক চা চামচ মধু ও আধা চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে প্রতিদিন খালি পেটে পান করলে ওজন কমবে ইনশাল্লাহ। প্রতিদিনের নিম পাতার রস খেলে মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায় এবং কোলেস্টেরল কমে, যার ফলে শরীরের ওজন কমতে থাকে।

ডায়াবেটিস রোগের ক্ষেত্রে নিমপাতার গুরুত্ব

ডায়াবেটিস কমাতে নিম পাতার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিদিন সকালে নিয়মিত পাঁচটি গোলমরিচ ও দশটি নিমপাতা বেটে খেলে তা ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে। নিমপাতা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এক কাপ নিম পাতায় ৩৫ গ্রাম ক্যালোরি থাকে।
তাই প্রতিদিন এক কাপ করে নিম পাতা খেলে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। যদি কোন ব্যক্তির ব্লাড সুগারের মাত্রা বেশি হয়ে যায় তাহলে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ টি নিম পাতা খেলে তার ব্লাড সুগারের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

দাঁতের রোগ নিরাময় করতে নিম পাতার গুরুত্ব

নিম পাতা, গাছের চালের গুঁড়া অথবা ডাল দিয়ে প্রতিদিন দাঁত মাজার ফলে দাঁত মজবুত ও শক্ত হয়। এতে বিভিন্ন ধরনের দাঁতের রোগ ও ভালো হয়। অনেক সময় দাঁতের ফাঁকে জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়ার কারণে মুখের দুর্গন্ধ হয়ে থাকে, প্রতিদিন নিম পাতা খালি পেটে খাওয়ার ফল্‌ দাঁতের জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দূর হয়ে যায়। এতে করে দাঁতও ভালো থাকে এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।

ক্ষতস্থান নিরাময়ে নিম পাতার উপকারিতা

শরীরের যেকোনো স্থানে কেটে গেলে বা পুড়ে গেলে অথবা ক্ষতস্থানে নিম পাতা বেটে লাগানো হলে, তা ভেষজ ওষুধের মত কাজ করে, দ্রুত সেই স্থান সারিয়ে তোলে। এছাড়া যদি তকের কোন স্থানে চুলকানি হয়, তাহলে নিমপাতা ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার কর, তারপর সেটিকে বেটে শরীরের সেই চুলকানি স্থানে লাগালে দ্রুত ভালো হয়ে যায়।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে নিম পাতার উপকারিতা

যদি কোন ব্যক্তি নিম পাতার গুড়োর সাথে হলুদের গুঁড়ো মিশ্রণ করে প্রতিদিন তাকে ব্যবহার করে, তাহলে তার ত্বকের উজ্জ্বলতা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও বিভিন্ন উপায়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানো যায়, যেমন-নিম ও অ্যালোভেরার মিশ্রণ দিয়েও ত্বক ফর্সা করা যায়।
দই ও নিমের মিশ্রণ ব্যবহার করেও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানো যায়, অথবা নিম ও চন্দন দিয়ে ফেসওয়াশ বানিয়ে ত্বকে ব্যবহার করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে পারে, এতে করে প্রাকৃতিক উপায়ে যেমন আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় তেমনি এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকার সম্ভাবনা ও কম হয়।

নিম পাতার অপকারিতা

বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রমাণ মিলেছে প্রকৃতির এক অন্যতম সৃষ্টি এই নিম পাতা। তবে এর হাজারো গুণ থাকলেও পাতাটি কারো কারো ক্ষেত্রে অনেক ক্ষতি করে থাকে।
নিম পাতার ক্ষতিকর দিকগুলাঃ
১। বেশিদিন খালি পেটে নিম পাতা খেলে ক্ষতি হতে পারে। আর তাই বেশি দিন ধরে নিমপাতা না খাওয়াই ভালো।
২। কারো যদি নিম পাতা খাওয়ার ফলে বমি ভাব বা ডায়রিয়া অথবা মাথা ব্যাথা দেখা দেয় তাহলে সাথে সাথে এটা খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া উচিত।
৩। গর্ভবতী মায়েদের জন্য নিম পাতা সহনীয় নয়। এটি গর্ভপাতের কারণ হতে পা।
৪। যাদের নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা আছে তাদের নিম পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৫। দিনে সর্বোচ্চ দুটি নিম পাতা খাওয়া উচিত, এর বেশি ব্যবহার উপকারের থেকে বেশি ক্ষতি করতে পারে।
৬। নিম পাতা খাওয়ার ফলে শরীর দুর্বল হতে পারে, মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে। এজন্য নিম পাতা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত।

লেখকের মন্তব্য

এতক্ষণ আলোচনার মাধ্যমে আমরা খালি পেটে নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলাম। মানব জীবনে নিম পাতা খাওয়ার উপকারিতা বা গুরুত্ব যেমন অপরিসীম, তেমনি উপকারিতার পাশাপাশি এর অপকারিতাও রয়েছে বেশ কিছু। প্রতিদিন কি পরিমান নিমপাতা আমাদের খাওয়া উচিত, তা একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে খাওয়াটাই ভালো। যদিও এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তেমন নেই।
এতক্ষণ ধৈর্য্য সহকারে আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময় দিয়ে আমাদের আর্টিকেল পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা । এরকম তথ্যবহুল বা আপনার কাছে ভালোলাগা এমন সব আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন, কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন এবং শেয়ারের মাধ্যমে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url