অল্প বয়সে চুল পড়ার কারন ও প্রতিকার
অল্প বয়সে চুল পড়ার কারনে কিশোর কিশোরীরা অনেক সময় সমস্যায় পরে। আল্লাহ তাআলা মানুষকে সুন্দর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, সেই সুন্দর সৃষ্টির মধ্যে চুল একটি। কিন্তু আল্লাহর সৃষ্টির এই সুন্দর চুল যখন অল্প বয়সেই ঝরে যায় তখন তা একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। অল্প বয়সে চুল পড়া শুধু কিশোরদের নয় এটি কিশোরীদের জন্যেও উদ্বেগের বিষয়।
দৈনিক সাধারণত মানুষের ১০০ বার এর অধিক চুল পড়তে পারে। কিন্তু এই চুলগুলো আবার গজিয়েও যায়। তবে চুল গজানোর পরিমাণ যদি চুল ঝরার তুলনায় কম হয় তখন সেটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য কিশোর কিশোরীদের খাবারের বিষয়ে সচেতন হওয়া এবং চুলের প্রতি যত্নশীল হওয়া উচিত।
ভূমিকা
অল্প বয়সে চুল পড়ার সমস্যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেমন আমাদের কিছু ভুলের কারণে বা চুলের প্রতি যত্নশীল না হওয়ার কারণে চুল ঝরে পড়তে পারে এছাড়া ও বংশগত কারণ ও শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে অধিক পরিমাণে চুল ঝরে পড়তে পারে। অল্প বয়সে চুল পড়ার কারন এবং প্রতিকার নিচে আলোচনা করা হলো।
অল্প বয়সে চুল পড়ার কারন
- বিভিন্ন কারণে অল্প বয়সে চুল পড়তে পারে। এর মধ্যে একটি কারণ হচ্ছে শরীরে পুষ্টির ঘাটতি। অল্প বয়সের কিশোর কিশোরীরা তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে গিয়ে চাহিদার তুলনায় খাবার কম খায়। এতে তাদের শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেই। শরীরের এই পুষ্টিহীনতা প্রভাব তাদের চুলের উপরও পড়ে। চুলের পুষ্টির জন্য বায়োটিন এবং ভিটামিন এ, বি, সি, ডি এবং ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- এছাড়াও চুলকে ভালো রাখতে কিশোর কিশোরীদের প্রোটিন ও বেশ কিছু খনিজ উপাদান নিয়মিত গ্রহণ করা উচিত। কলিজা, বাদাম, ডিমের কুসু্ম, কলা, মিষ্টি আ্লু, বীজ, মাশরুম, ব্রকলি এই জাতীয় খাবার নিয়মিত গ্রহণে কিশোর কিশোরীদের শরীরে পুষ্টি এবং ভিটামিনের অভাব মেটাতে পারে।
- থাইরয়েডের সমস্যা অল্প বয়সে চুল পড়ার কারন হিসেবেও গণ্য হয়। এই সমস্যার ফলে মাথায় নতুন চুল গজাতে বাধা দেয়। ফলে অতিরিক্ত চুল পড়তে দেখা যায়।
- দীর্ঘ সময় ধরে ভেজা চুল ঢেকে রাখলে মাথায় ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে। ফলে মাথা চুলকায় বা মাথার ত্বক লাল হয়ে যায়। এই ছত্রাকের সংক্রমনের কারণেও চুল পড়তে পারে।
- রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে বারবার চুলের রং করা এবং চুল স্ট্রেস করার কারণে চুলের অনেক ক্ষতি হয় এর ফলে চুল ভেঙে যেতে বা চুল পড়ে যেতে পারে।
- সোডিয়াম ক্লোরাইড ও সালফেট যুক্ত রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে শ্যাম্পু তৈরি করা হয়। যা চুলের প্রয়োজনীয় প্রোটিন ভেঙে ফেলতে সাহায্য করে এর ফলে চুল ভেঙ্গে যায় এবং চুলের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় ও চুল পড়া বৃদ্ধি পেতে পারে।
- বিভিন্ন হেয়ার স্টাইল যা চুলকে টানটান করে রাখে, এর ফলে চুলের ফলিকল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ফলে চুল ভেঙে যেতে পারে।
- বিভিন্ন অস্ত্র প্রচার, গুরুতর অসুস্থতা বা উচ্চ জ্বরের মত বিভিন্ন কারণে সাময়িকভাবে অধিক পরিমাণে চুল পড়তে পারে।
চুল পড়া কমায় যেসব তেল
বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান যেমন নারিকেল তেল, আমলকির গুড়া,কারি পাতা চুলের স্বাস্থ্য রক্ষার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান তেলের সাথে মিশিয়ে চুলে মাখালে চুল পড়ার সমস্যা কমানো যেতে পারে।
ভৃঙ্গরাজ গাছ থেকে উৎপাদিত তেলে রয়েছে লৌহ, ভিটামিন ই এবং ম্যাগনেসিয়াম। যা চুলের গুড়াকে শক্ত করে এবং চুলের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
চুল পড়া কমানোর ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক উপাদান গুলোর মধ্যে পেঁয়াজের রস আরেকটি অন্যতম উপাদান। পেঁয়াজের রসে সালফার থাকায় কোলেজেনের মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করে, এর ফলে চুলের গোড়া শক্ত হয়।
চুল পড়া কমানোর জন্য যা খাওয়া দরকার
- চুল পড়া বন্ধে ডিম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কারণ ডিমে রয়েছে আয়রন, ভিটামিন বি১২, প্রোটিন, বায়োটি, জিংক এবং ওমেগা এই ছয়টি উপাদান। এগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি অভাব হলে চুল পড়তে থাকে। সে কারণে চুল পড়া বন্ধে ডিম খাওয়া আবশ্যক ।
- চুল পড়া রক্ষায় গাজরের গুরুত্ব অপরিসীম। গাজরে রয়েছে ভিটামিন এ যা চুলের ভেতর পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে। চুলের গোড়াকে শক্ত করে চুলকে ময়শ্চারাইজড করে থাকে। তাই চুল পড়া রোধে আমাদের নিয়মিত গাজর খাওয়া উচিত।
- ভিটামিন এ, ভিটামিন স, ফোলেট এবং আয়রনের উৎস হিসেবে পালং শাকের জুড়ি নেই। চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই উৎস গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই চুল পড়া দ্রুত বন্ধ করতে চাইলে আমাদের বেশি করে পালং শাক খাওয়া উচিত।
- চুলের যত্নে আমরা মিষ্টি আলুকে ও কাজে লাগাতে পারি। কেননা মিষ্টি আলুতে রয়েছে বিটা- ক্যারোটিন জাব ভিটামিন এ শোষণ করতে সাহায্য করে। তাই চুলের ঘনত্ব বাড়াতে মিষ্টি আলু বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
- সবুজ কড়াইশুঁটি চুলের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য বেশ উপকার। সবুজ কড়াইশুঁটিতে জিংক , আয়রন এবং ভিটামিন বি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় যা চুলের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই চুলের স্বাস্থ্য রক্ষার্থে অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি সবুজ কড়াইশুঁটি ও খাদ্য তালিকায় সংযুক্ত করতে হবে।
- মেথির বিজে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন কে এবং ফলিক এসিড থাকে যা চুল পড়া বন্ধ করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
- ওঠস এ শুধুমাত্র ফাইবার নয় বরং এতে আয়রন, জিংক, এবং ওমেগা ৬ ফ্যাটি এসিড এর মত প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান এতে রয়েছে। যা মাথার ত্বক ভালো রাখতে এবং চুল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- দই কিংবা পনির এ প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম থাকে যা চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই চুল ভালো রাখতে আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় দই কিংবা পনির জাতীয় খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
কি ওষুধ খেলে চুল ঘন হয়
অল্প বয়সে চুল পড়ার সমস্যা সমাধানের জন্য দুইটি ওষুধ প্রচলিত আছে ।এদের একটি হচ্ছে ফিনাস্টেরাইড যা শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য এবং অপরটি হচ্ছে মিনোক্সিডিল যা পুরুষ এবং মহিলা উভয়ই ব্যবহার করতে পারে ।তবে সবার ক্ষেত্রে এগুলো সমান কার্যকরী নয় এছাড়াও এই ওষুধ দুটির কিছু না কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে ।
পেঁয়াজের রস মাথায় দিলে কি হয়
মাথার পিএইচের নিয়ন্ত্রণ করে পেঁয়াজের তেল। ফলে মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং চুল বাড়তে থাকে। মাথার ত্বক সুস্থ রাখতে এবং চুলের গোড়া শক্ত করতে পেঁয়াজের রস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পেঁয়াজের রসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং চুল ঘন করতে সাহায্য করে।
কত বছর বয়স পর্যন্ত চুল গজায়
প্রতিদিন কিছু না কিছু চুল ঝোরে পড়বে, এটাই স্বাভাবিক। তবে চুল ঝরে পড়ার পাশাপাশি তুলনামূলকভাবে যদি না গজায় তাহলে চুল পাতলা হতে শুরু করে। তবে নতুন চুল কিভাবে গজাবে তা অনেকাংশে নিজের উপর নির্ভর করে। শারীরিক গঠন ভেদে কত বছর বয়স পর্যন্ত চুল গজাতে পারে তা নির্ভর করে বলে বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন। তবে বৃদ্ধ বয়সেও মাথায় নতুন চুল গজাতে পারে।
লেখকের মন্তব্য
বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম অল্প বয়সে চুল পড়ার কারন এবং এর থেকে কিভাবে প্রতিকার পাওয়া যায়। চুল মানুষের সৌন্দর্যের প্রতীক। নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণ ও যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে মানুষ এই সৌন্দর্যকে ধরে রাখতে সক্ষম। তাই আমাদের উচিত উপরিক্ত নিয়ম মেনে চুলের যত্ন নেওয়া।
এতক্ষণ ধরে আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের এই পোস্টটি করার জন্য আপনাকে জানায় আন্তরিক শুভেচ্ছা। এইরকম তথ্যবহুল বা আপনার কাছে ভালোলাগা আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন, কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন এবং শেয়ারের মাধ্যমে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url