পিত্তথলির পাথরের লক্ষণ ও এর চিকিৎসা
পিত্তথলির পাথর মানুষের জন্য খুবই পরিচিত একটা সমস্যা । পিত্তথলিতে পাথর হয়েছে এমন রোগের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে । অনেকেই পিত্তথলিতে পাথর হয়েছে এটা বুঝতে পারে না এমনকি এর লক্ষণও প্রকাশ পায় না । এর ফলে মানুষের দেহে নিরবেই পিত্তথলির পাথরের প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন রোগ হতে পারে ।সুতরাং আমাদের দেহকে সুস্থ রাখতে অবশ্যই সতর্ক এবং সচেতনতা প্রয়োজন ।
রোগ সৃষ্টির শুরুতে আমাদের অবশ্যই চিকিৎসা করা অতি প্রয়োজন । আপনার অসচেতনতা এবং অবহেলার কারণে মারাত্মক বিপদ হতে পারে । কিন্তু পিত্তথলির পাথর কি সত্যি সত্যি রাস্তায় কুড়ানো নূরী পাথরের মত নাকি সেটা অন্য কিছু ?পিত্তথলির পাথর হয়েছে এটা আপনি কিভাবে জানতে পারবেন? আসুন তাহলে পিত্তথলির পাথরের লক্ষণ এবং এর চিকিৎসা বিষয়ে আরো কিছু তথ্য জেনে নেই।
ভূমিকা
মানুষের দেহের বুকের পাঁজরের ডান দিকে পেটের উপরের অংশের যকৃত বা লিভার বা কলিজার নিচে যুক্ত থাকে পিত্তথলি । পিত্তথলির কাজ হল পিত্তরস তৈরি করা । আরে পিত্তরস খাবার হজমে বিশেষ করে চর্বি জাতীয় খাবার হজমে সাহায্য করে । পিত্তরাস হলো হলুদ বর্ণের তরল পদার্থ । এতে থাকে কোলেস্টেরল, ক্যালসিয়াম,লবণ ,এসিড ও অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান । আর এই পিত্তরাসের বিভিন্ন উপাদান দিয়েই তৈরি হয় পিত্তথলির পাথর।
পিত্তথলির পাথরের লক্ষণ
পিত্তথলিতে পাথর হলে এতে প্রদাহ হয় ফলে পেটের ডানদিকে তীব্র ব্যথা করে । এ ব্যথা কয়েক মিনিট থেকে শুরু করে কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে ।
পেটের মাঝ বরাবর ,পেটের পিছন দিক ,কাঁধ, এমনকি বুকের ভিতরে ও ধীরে ধীরে এই ব্যথা সরিয়ে পড়তে পারে । এর ফলে বমি ভাব বা বমি এছাড়া হালকা জ্বর দেখা দিতে পারে ।
পিত্তথলির পাথর অনেক সময় বের হতে যেয়ে পিত্তনালীতে আটকে যায় । এর ফলে বিলিরুবিনের বিপাক ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় ফলে জন্ডিসও হতে পারে ।
পিত্তথলির পাথর নির্ণয়ের জন্য এসব লক্ষণ এর পাশাপাশি আল্ট্রাসনোগ্রাম যথেষ্ট হবে । পাথরের অবস্থান নির্ণয় করতে বা প্রয়োজনে বের করতে ইআরসিপি জাতীয় পরীক্ষা করা যেতে পারে ।
আলসার ,যকৃতের কোনো সমস্যা এমনকি হৃদরোগেও পিত্তথলির পাথরের লক্ষণের কাছাকাছি ধরনের ব্যথা হতে পারে বলে সেগুলোর অবস্থা ও নির্ণয় করে নেওয়া ভালো ।
পিত্তথলির পাথরের বড় লক্ষণ হচ্ছে পেটের ডান দিক থেকে ব্যথা শুরু হয়ে কাঁধ পর্যন্ত পৌঁছায় । এরকম লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন ।
পিত্তথলির পাথর কেন হয়
মানুষ যখন চর্বিযুক্ত খাবার খায় তখন গলব্লাডার খাবারটা হজম করার জন্য পিত্তনালীর মাধ্যমে পিত্তরস কে অন্ত্রে ঠেলে দেয় । পিত্তরসের যেকোনো পরিবর্তনের ফলে পিত্তথলিতে ছোট ছোট নূরের মত পাথর হতে পারে । এটাই সাধারণত বলা হয় পিত্তথলি বা পিত্তথলির পাথর । পিত্তথলির পাথর ছোট ছোট বালুর দানার মত ও হয়ে থাকে । এটি মোটরের দানা বা এর চেয়ে বেশি শক্ত হয়ে থাকে । এটি কোন রঙের বা কোন আকৃতির হবে তা নির্ভর করে কি ধরনের পদার্থ দিয়ে পাথর তৈরি হয় তার ওপর ।
কোলেস্টেরল ,বিলিরুবিন বা ক্যালসিয়াম ইত্যাদি পদার্থের সংমিশ্রণে তৈরি এই পাথরগুলো পিত্তরসের সঙ্গে মিশন অবস্থায় থাকে ।এদের রং বাদামি ,ময়লাটে সাদা বা কুচকুচে কালো হতে পারে ।
পিত্তথলির পাথর দূর করার উপায়
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগে বাড়ির কিছু কিছু খাবার খাওয়া যেতে পারে । সেগুলি হল
হলুদ পেটের সমস্যা সমাধানে বড় ভূমিকা পালন করে । হলুদে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এর গুণ । যা পিত্তরস কে ভালো রাখতে সাহায্য করে । রোজ সকালে খালি পেটে মধুর সাথে কাচা হলুদ মিশে ফেলে শরীর ভালো থাকে ।
লেবুর রস পেটের রোগ সারাতে খুবই উপযোগী । লেবুর রসে আছে ভিটামিন সি । সকালে খালি পেটে এক গ্লাস পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে গলব্লাডারের স্টোন আটকানো যেতে পারে ।
নারকেল তেল পিত্তথলির পাথর দূর করতে সাহায্য করে । দুই থেকে তিন চামচ নারকেলের তেলের সাথে এক থেকে চার গ্লাস আপেলের রস ,চার থেকে পাঁচ কোয়া রসুন,এক টুকরা আদা থেঁতো করে একত্রে মিশ্রণ তৈরি করে খেলে পাথর গলে যায় ।
স্ক্যানবেড়ির জুস গলব্লাডারের স্টোন সারাতে খুবই উপকারী । এই জুছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে । ফাইবার কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে । কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকলে পিত্তথলিতে পাথর হয় না ।
রোগটি কাদের বেশি হয়
মোটা এবং অতিরিক্ত ওজন যাদের সেসব ব্যক্তিদের পিত্তথলির পাথর বেশি হয় । পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে এ রোগের প্রবণতা বেশি দেখা যায় । এছাড়া জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাওয়ার অভ্যাস ,অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ এবং 40 এর বেশি বয়সের লোকদের মধ্যে এই রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে ।
চিকিৎসা
প্রদাহ ও তীব্র ব্যথা অনুভূত হলে সেই সময়ে অস্ত্র প্রচার করা যাবে না । এ অবস্থায় সাধারণত কয়েকদিন মুখে খাবার বন্ধ করে দিতে হবে । স্যালাইন, এন্টিবায়োটিক ও ব্যথা নাশক ওষুধ দিয়ে প্রাথমিকভাবে উপশমের চেষ্টা করতে হবে । পিত্তথলি ফেলে দেওয়ার জন্য অস্ত্র প্রচার দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর বা দুই থেকে তিন মাস পর করলেও ক্ষতি নেই ।
পেট ফুটো করে বা পেট কেটে এই দুইভাবে অষ্টপ্রচার করা যায় । তবে পিত্তনালীতে পাথর আটকে গেলে ইআরসিপি যন্ত্রের মাধ্যমে পাথর বের করে আনা হয় ।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে অপারেশন হলো পিত্তথলির পাথরের চিকিৎসার প্রধান উপাদান । এই অপারেশন দুই ভাবে করা যায় । ০১) সরাসরি পেট কেটে ২) নেপার কোপিক মেশিনের সাহায্যে । লেপারস্কোপিক পদ্ধতি খুবই সুবিধা জনক আধুনিক চিকিৎসা জগতে ।
লেপারস্কোপ এর অর্থ হচ্ছে ক্যামেরা দিয়ে দেখা । পিত্তথলি পেটের যে অংশে অবস্থিত সেখানে ছোট ছোট ছিদ্র করে সূক্ষ্ম সরু যন্ত্র দিয়ে পিত্তথলির পাথর অপসারণ করা হয় । এই অপারেশনের পরে রোগীর ব্যথা এবং রক্তক্ষরণ কম হয়। ফলে রোগী দু-একদিনের মধ্যেই ভাল হয়ে যায় ।
কিডনি ও পিত্তথলির পাথর গলবে যে ডিম খেলে
কোয়েল পাখির ডিম কিডনি, লিভার এবং পিত্তথলির স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । এই ডিম কিডনির পাথরের বৃদ্ধিতে বাধা দেয় এবং সিস্ট গুলো ভেঙ্গে ফেলতে সাহায্য করে । এই ডিম লেসিথিন সমৃদ্ধ যা কিডনি বাপের তো খালি পাথর ভাঙতে সাহায্য করে ।
লেখকের মন্তব্য
উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম পিত্তথলির পাথরের লক্ষণ এবং এর চিকিৎসা কিভাবে করতে হয়।তাই আমাদের উচিত যেসব খাবার খেলে পিত্তথলির পাথরের লক্ষণ দেখা দিতে পারে সেগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ি চলা।
এতক্ষন ধরে আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের পোষ্টটি পরার জন্য আপনাকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন।এই রকম তথ্যবহুল বা আপনার কাছে ভালোলাগা পোষ্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন, কমেন্টবক্সে আপনার মতামত দিন এবং শেয়ারের মাধ্যমে অন্যকে পরার সুযোগ করে দিন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url