হিট ওয়েভ কি? হিট ওয়েভ থেকে কিভাবে নিজেকে বাঁচাবেন।

হিট ওয়েভ বা তাপ প্রবাহ বলতে অস্বাভাবিক গরম আবহাওয়ার সময় কালকে বোঝানো হয়। বিশেষ করে চৈত্র ও বৈশাখ মাসে আমাদের দেশে এধরনের আবহাওয়া বেশি দেখা যায় । এ সময় স্বাভাবিকের থেকে আবহাওয়া অনেক বেশি গরম হয়। যার ফলে মানুষের অসুস্থতার পরিমাণ বেড়ে যায়।

এ সময় আমাদের উচিত প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না বেরোনো। বৃদ্ধ এবং শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আমাদের দেশে প্রত্যেক বছর এই হিট ওয়েব এর কারণে অনেক মানুষ মারা যায়। হিট ওয়েভ বা তাপ প্রবাহ থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য তাই আমাদের উচিত বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী চলা।

ভুমিকা

একটি উচ্চো-চাপ এলাকা শক্তিশালী হয়ে এবং একটি এলাকায় কয়েক দিন বা সপ্তাহ পর্যন্ত উপরের বায়ুমন্ডলে অবস্থান করে ঠিক তখনই হিট ওয়েভ বা তাপ তরঙ্গের সৃষ্টি হয়। মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডেও মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলে এই হিট ওয়েভ বা তাপ প্রবাহ।
এটি শ্রম উৎপাদনশীলতায় ব্যাপক বাধা হয়ে দাঁড়ায় ,কৃষি ও শিল্প প্রক্রিয়ায় ব্যাপক ক্ষতি করে এবং স্বাভাবিক জনজীবনকে অস্বাভাবিক করে তোলে। তাই আমাদের উচিত এ সময় খুব সাবধানে চলাচল করা।

হিট ওয়েভ কি

হিট ওয়েভ হচ্ছে ইংরেজি শব্দ যার বাংলা অর্থ হল তাপ প্রবাহ বা তাপ তরঙ্গ। এটিকে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞবিদগণ বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। যেমন-
অস্বাভাবিক আবহাওয়ার সময়কালকে হিট ওয়েভ বলে “আইপিসিসি” সংজ্ঞায়িত করেছেন।এছাড়াও আপেক্ষিক তাপমাত্রার সীমারেখার সাথে সংজ্ঞায়িত করা হয়, যা কয়েক দিন বা মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে।
সূচকের ওপর নির্ভর করেও হিট ওয়েভ এর সংজ্ঞা দেওয়া হয়ে থাকে যা হল- একটানা পাঁচ দিনের বেশি দৈনিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্র ছাড়িয়ে যায় এর ফলে তার তরঙ্গ বা হিট ওয়েভ তৈরি হয়।
আবহাওয়াবিদগণ শব্দকোষ থেকে হিট ওয়েভ বা তাপ তরঙ্গের সংজ্ঞা দিয়েছেন যা হলো- অস্বাভাবিক এবং অস্বস্তিকর গরম এবং সাধারণত আদ্রো আবহাওয়ার সময়কালকে হিট ওয়েভ বা তাপ তরঙ্গ বলে।

হিট ওয়েব বা হিট স্ট্রোক থেকে কিভাবে নিজেকে বাঁচাবেন

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখনতাপ প্রবাহের কবলে পতিত হয়েছে । চলতি মৌসুমের তাপমাত্রা অনেক জায়গাতেই ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হয়ে গিয়েছে যা স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি । চলতি মাসে এ তাপমাত্রা আরো বাড়তে পারে বলে আবহাওয়াবিদরা বলেছেন যা সাধারণ মানুষের জন্য খুবই কষ্টকর ।
এসময় বয়স্ক শিশুদের জন্য বিশেষ সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত। জরুরী কোনো কাজ না থাকলে বাড়ির বাইরে না যাওয়াই ভালো । প্রতিবছর অনেক মানুষের মৃত্যুর কারণ হয় এই হিটস্টোক । প্রচন্ড গরমে বাইরে থেকে এসে অনেক ঠান্ডা পানি পান করা একেবারে ঠিক নয় । এতে ঠান্ডা সর্দি হওয়ার পাশাপাশি হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে । হিট ওয়েব বা হিট স্টোক থেকে বাঁচতে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ঠান্ডা পানি পান করতে হবে ।
যখন তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এ পৌঁছে যাবে তখন ঘন ঘন ঠান্ডা পানি বিশেষ করে ফ্রিজের পানি বা বরফ জাতীয় পানি পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে । এতে করে করেই রক্তনালী সংকুচিত হয়ে হিট স্টকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে ।
বাইরে তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার চেয়ে বেশি হলে জরুরী কাজ ব্যতীত বাইরে না গিয়ে ঘরে অবস্থান করায় ভালো হবে বিশেষ করে ছায়ায় অবস্থান করতে হবে । স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি ধীরে ধীরে পান করতে হবে এছাড়াও বাইরে থেকে এসে সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা পানি দিয়ে হাতমুখ ধৌত না করে আগে ঘরের তাপমাত্রার সাথে দেহকে খাপ খাইয়ে নিতে হবে ।
জুস জাতীয় পানি পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে । স্বাভাবিক পানি বা ডাবের পানি পান করা যেতে পারে । বেশি পরিমাণে কমল পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে । কোমল পানীয় আপনার শরীরকে সাময়িকভাবে চালু রাখবে ঠিকই কিন্তু এর মধ্যে কোন পুষ্টি উপাদান নেই । বরং এটি শরীরকে আরো ক্ষতিগ্রস্ত করে তুলতে পারে । বাইরের ভাজাপোড়া এবং অতিরিক্ত পরিমাণ ঝাল জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে ।

হিট স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণ এবং উপসর্গ

হিট স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণ হচ্ছে মাথা ঘোরা , নিম্ন এবং উচ্চ রক্তচাপ , শুষ্ক ত্বক , বমি বমি ভাব , দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, দ্রুত হাঁটরেট ।
হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায়
বৃটেনের স্বাস্থ্য সংস্থা এ বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন তা হলঃ
যারা নিজেদের শরীরকে ঠান্ডা রাখতে হিমশিম খাচ্ছে বিশেষ করে বয়স্ক লোক যারা বিভিন্ন রকমের শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন এবং যারা একা থাকেন তাদের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে ।
বেশিরভাগ সময় ঘরে অবস্থান করুন । ঘরের যেসব জানালা সূর্যের দিকে মুখ করে রয়েছে সেগুলো বন্ধ রাখুন জানালার পর্দা ঢেকে দেন ।
প্রচুর পরিমাণে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি পান করুন ।
শিশু বা বয়স্ক লোককে একা ঘরে বা গাড়িতে রেখে কোথাও যাবেন না ।
সূর্যের রশ্মি যে সময় বেশি তীব্র হয় বিশেষ করে সকাল ১১ টা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত এ সময়ে সূর্যের তাপ থেকে নিজেকে দূরে রাখুন ।
বেশিরভাগ সময় ছাড়াই অবস্থান করুন এবং সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন ।
বাইরে যাওয়ার সময় মাথায় লম্বা বারান্দাওয়ালা টুপি ব্যবহার করুন ।
যে সময়টাতে গরম বেশি সেই সময় শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকুন ।
বাইরে বের হওয়ার সময় খাবার পানি সঙ্গে রাখুন ।
অনেক বেশি গরম লাগছে বলে যেখানে পানি দেখছেন সেখানে শরীর ঠান্ডা করার জন্য নেমে পড়বেন না এতে করে শরীরের আরও বেশি ক্ষতি হতে পারে যা আপাতত চোখে পড়ছে না ।
অন্যান্য দিন আপনি যে সময়ে বিছানায় ঘুমাতে যান সে একই সময়ে বিছানায় যাবেন এবং বিছানায় যাওয়ার সময় ঠান্ডা মজা পড়তে পারেন ।
যে খাবারগুলো খাবেন না
সূর্যের প্রচণ্ড চাপে যখন সকলে ঘরে বাইরে বের হতে পারেন না তখন অনেকেরই অফিসে বা কাজের জন্য বাইরে বের হতে হয় । এ সময়ে অবশ্যই সঙ্গে খাবার পানি রাখবেন । এবং শরীরকে হাইড্রেট রাখবেন । প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস করে স্বাভাবিক তাপমাত্রার খাবার পানি খাবেন । এছাড়া ক্যাফেইন যুক্ত খাবার , মদ , বেশি চিনি যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলবেন ।
ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করুন
এ সময় ঢিলেঢালা নরম সুতি কাপড় পরিধান করুন যাতে আপনি ভালোভাবে শ্বাস নিতে পারেন এবং আপনার শরীর ঠান্ডা থাকে । এ সময় বাইরে যেতে হলে অবশ্যই ছাতা সাথে নিতে হবে অথবা টুপি পরিধান করে যেতে হবে ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ঢাকা অথবা বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় নির্বিচারে গাছ কাটা হয়েছে বলেই এখানে তাপমাত্রা এতটা বেড়েছে । ঢাকায় প্রায় ৫০ শতাংশ সবুজ কমেছে বিগত কয়েক বছরে । এত গাছ কেটে সড়ক এবং ভবন তৈরি করার জন্য পরিবেশের উপর এরূপ বিরূপ প্রভাব পড়েছে । রাতারাতি এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয় । তাপমাত্রা এবং পরিবেশ দূষণ কমাতে আমাদের অনেক বেশি পরিমাণে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে ।

লেখকের মন্তব্য

উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম হিট ওয়েভ কি, হিট ওয়েভ বলতে আসলে কি বোঝায় এবং হিট ওয়েভ থেকে নিজেকে কিভাবে রক্ষা করবেন। আমাদের উচিত এ সময় খুব সাবধানতার সাথে চলাফেরা করা, সবসময় থান্ডা পানি খাওয়া এছাড়া বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ি চলা।
এতক্ষণ ধরে আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এরকম তথ্যবহুল বা আপনার কাছে ভালোলাগা পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন, কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দেন এবং বেশি বেশি শেয়ারের মাধ্যমে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url