আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

আমাদের সবার কাছেই অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং সুস্বাদু ফল হচ্ছে আম। আম খাওয়ার উপকারিতা অনেক। এটি দেখতে যেমন অনেক সুন্দর এবং আকর্ষণীয় তেমনি আমি রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন মিনারেল এবং আন্টি অক্সিডেন্ট সহ আমাদের শরীরের জন্য অনেক প্রয়োজনীয় উপাদান।
আম খাওয়ার উপকারিতা


কাঁচা এবং পাকা উভয় আমি শরীরের জন্য উপকারী। পুষ্টিবিদদের মধ্যে আম কাঁচা হোক বা পাকা হোক শরীরের জন্য এর কোন নেতিবাচক দিক নেই বললেই চলে। কাঁচা আমের গুণ প্রসঙ্গে পুষ্টিবিদরা বলেন, ৪৪ ক্যালোরি পটাশিয়াম থাকে ১০০ গ্রাম কাঁচা আমের মধ্যে। বিশেষ করে আমে থাকা ভিটামিন এ চোখের চারিদিকে শুষ্ক ভাব দূর করে এবং চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে।

ভূমিকা

বাংলাদেশ এপ্রিল মাস থেকে কাঁচা আম পাওয়া যায়। তবে মে মাস থেকে পাকা আম আসতে শুরু করে। পাকা অথবা কাঁচা যেকোনো ধরনের আম খাওয়ার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবেনা। তবে ল্যাবএইড হাসপাতালের পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসনিম বলেন, পাকা আমে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি, শর্করা, আমি্‌ষ, ভিটামিন এ , বিটাক্যারোটিন, ইত্যাদি বেশি থাকে। তাই কাঁচা আমের তুলনায় পাকা আম বিশেষ করে আঁশযুক্ত পাকা আম শরীরের জন্য বেশি উপকারী।

আম খাওয়ার উপকারিতা

আম দেখতে যেমন আকর্ষণীয় এবং লোভনীয় তেমনি আম খাওয়ার উপকারিতা ও অনেক। একজন সুস্থ মানুষ প্রতিদিন ৩ থেকে চার কাপ পাকা আম খেলে এবং একটি কাঁচা আম খেলে ভিটামিন সি এর ভিটামিন সি এর দৈনিক চাহিদা প্রায় ৫০% পূরণ হয়ে যায়। এছাড়া আমের খোসাতেও অনেক পুষ্টিগুণ আছে। তাই আম খোসা সহ খেতে পারলে ভালো হয়। আম আমাদের শরীরের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা সম্পর্কে নিচে দেয়া হল -
  • হজমের সহায়ক
আম একটি প্রিবায়টিক ফল। এটি আমাদের পাকস্থলীর বিভিন্ন গাট ব্যাকটেরিয়ার জন্য বেশ উপকারী। ডায়েটারি ফাইবারের প্রায় ৭% থাকে ৩ থেকে ৪ কাপ আমে। যা পাকস্থালির হজম ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
  • ঘুমের সহায়ক
আমে ট্রপটোফ্যান ,মেলাটোনিন ও ম্যাগনেসিয়াম আছে যা আমাদের ঘুমকে ত্বরান্বিত করে এবং অনিদ্রা দূর করে।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধে
প্রায় ২০ এর অধিক ভিটামিন এবং মিনারেল ও আন্টি অক্সিডেন্ট আমে রয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে আমের মধ্যে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে তা স্তন ও কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। আরো অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে যে, আমে প্রোস্টেট ক্যান্সার, লিউকেমিয়া ও অন্যান্য ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান রয়েছে।
  • দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে
দৈনিক চাহিদার প্রায় ৮% ভিটামিন এ রয়েছে তিন থেকে চার কাপ আমে। এছাড়া আম বিটা ক্যারোটিন, আলফা ক্যারোটিন ও ভিটামিন এ এর ভালো উৎস। আর এই উপাদানগুলো আমাদের শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর পাশাপাশি দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।
  • ত্বক ও চুলের যত্নে
আমে থাকা ভিটামিন এ, সি ও ই আমাদের ত্বক ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে।
  • কোলেস্টেরল ঠিকঠাক
আমে রয়েছে উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি, ফাইবারও প্যাকটিন যা রক্তে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • অ্যালকালাইন লেভেল
আমে রয়েছে টারটারিক এসিড ও মালিক এসিড। এছাড়াও আমি সাইট্রিক এসিড রয়েছে যা শরীরের অ্যালকালি নামের রাসায়নিক ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
  • ওজন কমাতে
আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন। তাই প্রতিদিন একটি করে আম খেলে মানুষের শরীরের প্রতিদিনের ভিটামিনের চাহিদা মিটে যাওয়ার কথা বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এছাড়া আমের রয়েছে ফাইবার যা শরীরে পুষ্টি ও শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। তাই এ আমের মৌসুমে যারা নিজেদের ওজন কমাবেন বলে ঠিক করেছেন তারা বার্গার, কোলড্রিংস সাব স্যান্ডউইচ এর বিকল্প খাবার হিসেবে বেছে নেন আম।
  • হিট স্ট্রোক ঠেকাবে
গরমের এই সময়ে অতিরিক্ত তাপমাত্রায় হিড স্ট্রোক একটি সাধারণ ঘটনা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। আম আমাদের শরীরের ভিতরের অঙ্গ গুলোকে গরম হওয়া থেকে রক্ষা করে এবং আমাদের শরীরকে শীতল রাখতে সাহায্য করে।
  • রোগ প্রতিরোধ
আমে রয়েছে ক্যারোটেনয়েড যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও আমি রয়েছে ভিটামিন সি যা এর সহযোদ্ধা হিসাবে কাজ করে।
  • মনোযোগ ও স্মৃতির জন্য
অনেক সময় আমরা কাজের প্রতি মনোযোগ হারিয়ে ফেলি। আমাদের এই মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে আম। ফলটি মেমরি বুস্টার হিসেবে কাজ করে।
  • বডি স্ক্রাব
বডি স্ক্রাব হিসাবে পাকা আম বেশ ভালো কাজ করে। আমের পেস্ট তৈরি করে তাতে একটু খালি মধু আর দুধ মিশিয়ে আলতো করে মাসাজ করে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে নিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
  • কাঁচা আমের পুষ্টিগুণ
পাকা আমের পাশাপাশি কাঁচা আম খাওয়ার উপকারিতা ও অনেক।পুষ্টিবিদরা বলেন,কাঁচা আমে রয়েছে ভিটামিন সি, কে, এ,বি ৬, ফোলেট ও অন্যান্য প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান। এছাড়াও ওর কাছে আমে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম। কাঁচা আম খুব বেশি মিষ্টি না হয় এতে চিনির পরিমাণ নেই বললেই চলে। তাই ডাইবেটিকস রোগীরা বা যারা ডায়েট করছেন তারা অনায়াসেই কাঁচা খেতে পারেন।

কাঁচা আম খাওয়ার উপকারিতা

কাঁচা আমের প্রচুর পরিবারে ভিটামিন সি রয়েছে। ভিটামিন সি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর কাজ করে। তাই বয়স ধরে রাখতে কাঁচা আম সাহায্য করে। এছাড়াও কাঁচা আমে রয়েছে ভিটামিন ই,যা শ্বেতরক্ত কণিকার কার্যকারিতা বাড়ায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। কাঁচা আমে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন যা হৃদপিন্ডের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
অতিরিক্ত ঘামের ফলে শরীর থেকে বের হয়ে যায় আয়রন এবং সোডিয়াম ক্লোরাইড। কাঁচা আম শরীর থেকে এগুলো বের হতে বাধা দেয় এবং ডিহাইড্রেশন থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
ঘামাছির সমস্যা গরমের সময়ে অনেকেরই হয়। কাঁচা আমের কিছু উপকারী উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরকে ঘামাচি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

কাঁচা আম কিভাবে খাবেন

এই তীব্র গরমে আমাদের স্বস্তি এনে দিতে পারে কাঁচা আমের স্বাদ। কাঁচা আমের চাটনী, কাঁচা আমের শরবত, আম দিয়ে ডাল রান্না, কাঁচা আমের ভর্তা এছাড়াও বিভিন্নভাবে কাঁচা আম খাওয়া যায়। এছাড়া আমের আচার করে আমকে সারা বছর সংরক্ষণ করেও খাওয়া যায়।

আম খাওয়ার অপকারিতা

যদিও আম খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া খুবই কম তবুও অতিরিক্ত পরিমাণে আম খেলে সামান্য কিছু অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় তা নিচে দেওয়া হল 
১। আম যেহেতু প্রাকৃতিক চিনির একটি উৎস, তাই ডাইবেটিকস রোগীদের অতিরিক্ত পরিমাণে আম খাওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য বিশেষজ্ঞ গন পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
২। আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার,যার ফলে বেশি পরিমাণ আম খেলে ডায়রিয়া হতে পারে।
৩।এটাও সম্ভব যে আম থেকে এলার্জি হতে পারে। তাই অনেক বেশি পরিমাণে আম খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো।
৪।আমে রয়েছে অনেক বেশি পরিমাণে ক্যালরি, যা আপনার শরীরের জন্য মোটেও ক্ষতিকর নয় কিন্তু বেশি পরিমাণে আম খেলে এটি আপনার ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে।
৫। বেশি পরিমাণে আম খেলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। তাই দিনে একটি বেশি আম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

লেখকের মন্তব্য

পরিশেষে বলা যায়, মধুমাস মানে রসে মাখামাখি করে আম খাওয়ার দিন। হিমসাগর, গোপালভোগ, ল্যাংড়া, খিরসা পাতি, আরো কত প্রজাতির আম রয়েছে। এসব প্রজাতির নামের মধ্যে যেন রয়েছে অর্ধেক প্রশান্তি। যদিও আম খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি তবুও এর সামান্য পরিমাণে কিছু অপকারিতা রয়েছে। তাই শিশু (৬-১০ মাস) এবং বয়স্ক লোকদের অতিরিক্ত পরিমাণে আম খাওয়া থেকে বিরত থাকা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো বলে আমি মনে করি।
এতক্ষণ ধরে আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের পোস্টটি পরার জন্য আপনাকে জানায় আন্তরিক ধন্যবাদ। এরকম তথ্যবহুল বা আপনার কাছে ভালো লাগা আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট টি বেসি বেসি ভিজিট করুন, কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন এবং শেয়ারের মাধ্যমে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url