বাংলাদেশের খেলাধুলা

বাংলাদেশে যেসব খেলা প্রচলিত আছে সেইসব খেলাকে মূলত বাংলাদেশের খেলাধুলা বলা হয়। বিনোদনের জন্য বা কখনো কখনো জ্ঞান অর্জনের সরঞ্জাম হিসাবে খেলাধুলাকে গণ্য করা হয়। এটি বিনোদনের একটি মাধ্যম যা শুধুমাত্র আনন্দ উপভোগের জন্যই নয় বরং মাঝে মাঝে পুরস্কারের জন্য করা হয়।
বাংলাদেশের খেলাধুলা

মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। পৃথিবীর প্রত্যেক দেশেই তাদের নিজস্ব কিছু খেলাধুলা রয়েছে। এসব খেলাধুলার মধ্যেই জাতীয় সত্তা সংস্কৃতির পরিচয় পাওয়া যায়।বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের স্বীকৃত খেলাধুলার পাশাপাশি কিছু নিজস্ব ঐতিহ্য সমৃদ্ধ খেলাধুলা প্রচলন রয়েছে। তাই বলা যায় খেলাধুলায় বাংলাদেশ সম্ভাবনাময়।

ভূমিকা

খেলাধুলা মূলত ঐতিহ্য, সৌন্দর্যবোধ এবং মিত্রতা রক্ষার্থে আয়োজন করা হয়। তবে কিছু কিছু খেলাকে মানুষ কাজ বা পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে । খেলাধুলা দুই ধরনের হয়ে থাকে। এদের একটি হচ্ছে কাজের মাধ্যমে এবং অন্যটি বুদ্ধির মাধ্যমে হয়ে থাকে। বিভিন্ন ধরনের খেলা রয়েছে এদের মধ্যে ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল, টেনিস, ব্যাডমিন্টন, কাবাডি, কুস্তি ইত্যাদি মানুষের প্রিয় খেলা।

বাংলাদেশের খেলাধুলা

বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হলো কাবাডি। কাবাডি খেলাটি সারাদেশে অনুষ্ঠিত হয়। যদিও অন্যান্য খেলার সাম্প্রতিক উত্থানের ফলে কাবাডি খেলাটি তার জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। তবে কাবাডি এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ নিয়মিত অংশ নিচ্ছে।
কাবাডি খেলায় বাংলাদেশ একসময় বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দল হিসেবে বিবেচিত হলেও বর্তমানে অর্থের অভাবে এবং অন্যান্য সমস্যার কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশের খেলাধুলার মধ্যে যেগুলো মানুষ পছন্দ করে তার বিবরণ নিচে দেওয়া হলঃ
  • ফুটবল
ফুটবল বাংলাদেশের খেলাধুলার মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল বাংলাদেশের জনমানুষের প্রতিনিধি হিসেবে ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শনী ফুটবল খেলে বিশ্ব জনমত গঠন করতে সহায়তা করেছে।
  • ক্রিকেট
বর্তমানে ক্রিকেট দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। ১৯৯৭ সালে জাতীয় দল আইসিসি ট্রফি জিতে এবং ১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মতো ক্রিকেট বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জনের পর থেকে এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়।
  • হকি
বাংলাদেশের মানুষের আরো একটি অন্যতম খেলা হচ্ছে হকি। জনপ্রিয়তার দিক বিবেচনা করে ফুটবল এবং ক্রিকেট এর পর হকির স্থান। তবে এই খেলাটির কর্মকর্তাদের দায়িত্বের অভাব এবং অপশাসনের ফলে এর জনপ্রিয়তা হ্রাস পেতে থাকে। ১৯৮৫ সাল থেকে হকি এশিয়া কাপে বাংলাদেশ নিয়মিতভাবে অংশগ্রহণ করে আসছে।
  • দাবা
বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় ইনডোর খেলা হচ্ছে দাবা। বাংলাদেশ অনেক প্রতিভাবান দাবা খেলোয়াড়ের জন্ম দিয়েছে। দাবা খেলার প্রথম সূত্রপাত হয়েছে ভারতে। বাংলাদেশের দাবা খেলোয়াড় নিয়াজ মোরশেদ প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার যিনি ১৯৮৭ সালে দক্ষিণ এশিয়া থেকে আবির্ভূত হন।

বাংলাদেশের ঐতিহ্যগত খেলা

বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরনের ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলা রয়েছে। এই খেলা গুলো সাধারণত এই খেলা গুলো সাধারণত ঘরের বাইরে খেলা হয়। এছাড়া বাড়ির চারপাশে বিদ্যমান উৎস থেকে সংগৃহীত খুব সীমিত সংস্থান সহ অনুষ্ঠিত হয়।
আজকাল নগরায়নের সাথে সাথে এই খেলা গুলো কমে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। নিচে কিছু ঐতিহ্যবাহী খেলার বিবরণ দেয়া হলোঃ
  • একটা দুক্কা বা কিত কিত
এই খেলাটি সাধারণত মেয়েরা খেলে থাকে। এই খেলাটি খেলার জন্য মাটিতে একটি আয়তক্ষেত্র অংকন করে সেখানে কয়েকটি কক্ষে বিভক্ত করা হয়। সেই সাথে মাটির পাত্রের ছোট ভাঙ্গা টুকরা দিয়ে এটি খেলা হয়। বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে ছোট মেয়েদের কাছে এই খেলাটি অতি জনপ্রিয়।
  • গোল্লাছুট
গ্রাম বাংলার কিশোর কিশোরীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং মজার খেলা হচ্ছে গোল্লাছুট। শহরের কিশোর কিশোরীরা অনেকেই এর সঙ্গে পরিচিত নয়। দুটি দলের মধ্যে এই খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এই খেলায় খেলোয়াড়ের সংখ্যা ৪-৬ থেকে ৮-১০ জন পর্যন্ত হতে পারে।
এই খেলায় দৌড়াদৌড়ি ও ছোটা ছুটির জন্য বেশ জায়গা প্রয়োজন হয়। দৌড়াদৌড়ি এবং ছোটা ছুটির জন্য এই খেলায় উত্তম শারীরিক ব্যায়ামও হয়। এই খেলায় বালক বালিকা সবাই অংশগ্রহণ করতে পারে।
  • ডাংগুলি
গ্রাম বাংলার অন্যতম গ্রামীণ খেলা হচ্ছে ডাঙ্গগুলি। সাধারণত কিশোর বয়সি ছেলেরা এই খেলায় অংশগ্রহণ করে। এই খেলার দুটি উপকরণ রয়েছে। এদের একটি হচ্ছে একটি দুই থেকে দেড় ফুট লম্বা লাথি অন্যটি হচ্ছে গুলি যা দুই ইঞ্চি লম্বা ছোট লাঠি। ২ থেকে ৫-৬ জন দুটি দলে বিভক্ত হয়ে এই খেলাটি খেলতে হয়।
  • কানামাছি
বাংলাদেশের খেলাধুলার মধ্যে গ্রামীণ একটা চমৎকার খেলা হচ্ছে কানামাছি। এই দেশের কিশোর কিশোরীরা এই খেলাটি খেলে থাকে। এই খেলায় একজনের চোখ বেঁধে দেয়া হয় সে অন্য বন্ধুদের ধরার চেষ্টা করে। সে যদি কাউকে ধরতে পারে এবং তার নাম বলতে পারে তাহলে তাকে কানা বলে সাব্যস্ত করা হয় এবং তার চোখ বেঁধে দেওয়া হয়।
  • লাঠি খেলা
একটি ঐতিহ্যগত মার্শাল আর্ট হচ্ছে লাঠি খেলা যা বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কিছু জায়গায় চর্চা করা হয়। যারা লাঠি খেলে তাদেরকে "লাঠিয়াল" বলা হয়।
  • নৌকা বাইচ
নদীতে নৌকা চালানোর প্রতিযোগিতার নাম হচ্ছে নৌকা বাইচ। হাজার হাজার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সংস্করণ হচ্ছে নৌকা বাইচ। নদীমাতৃক বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, আনন্দ আয়োজন, উৎসবও খেলাধুলার সবকিছুতেই নদী ও নৌকার সরব আনাগোনা রয়েছে।

বাংলাদেশ কোন খেলায় ভালো

বাংলাদেশে যেসব খেলা রয়েছে তার মধ্যে বিখ্যাত খেলা হচ্ছে ক্রিকেট, হকি, ফুটবল ইত্যাদি। বাংলাদেশের অফিসিয়াল খেলা হলো হাডুডু। এটি বিশ্বব্যাপী দশটি শীর্ষ  ক্রিকেটিং দেশের মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশ ১৯৯৯ সাল থেকে প্রায়ই বিশ্বকাপের জন্য যোগ্য হয়েছে।

প্রথম বাঙালি ক্রিকেটার

সারদা রঞ্জন রায় চৌধুরী ছিলেন অবিভক্ত বাংলার ক্রিকেটের জনক। তিনি 1958 সালের ২৪ শে মে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯২৫ সালের ১ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের ক্রিকেটের অন্যতম অগ্রদূত।

ফিফা রেন্টিং এ বাংলাদেশের অবস্থান

দেশে যেমন লোকজীবন ঘনিষ্ঠ খেলা অনুষ্ঠিত হয় তেমনি আন্তর্জাতিক খেলাতেও বাংলাদেশ অংশ নেয়। সর্বশেষ ফিফা রেংকিংয়ে বাংলাদেশ ৯১৬.৭৫ পয়েন্ট নিয়ে ১৮৩ নম্বর স্থানেই অবস্থান করছে।

বিশ্বের এক নাম্বার দল কোনটি

ফিফার সর্বশেষ রাংকিংয়ে ক্রমতালিকার এক নাম্বারে উঠে এসেছে লিওনেল মেসির দল। বিশ্বকাপ জয়ীরাই এখন বিশ্বে সেরা ফুটবল টিম। ছয় বছর পর ক্রমতালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে আলবিসেলেস্তারা। শীর্ষে থাকা আর্জেন্টিনার পয়েন্ট এখন ১৮৪০.৯৩।

বাংলাদেশে নারীর ফুটবল দলের নাম কি

বাংলাদেশের জাতীয় মহিলা ফুটবল দল হল আন্তর্জাতিক ফুটবলে প্রতিনিধিত্ব করা বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দল। এটি মহিলা ফুটবল কমিটির তত্ত্বাবধায়ণে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এটি এসিও ফুটবল কনফেডারেশনের সদস্য এবং দলটি এখনো বিশ্বকাপ বা এএফসি মহিলা এশীয় কাপের ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি।

বাংলাদেশের ক্রীড়া ক্ষেত্রে বিরাজমান সমস্যা

বাংলাদেশের খেলাধুলার ক্ষেত্রটি বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। সঠিক পরিকল্পনা এবং প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, পর্যাপ্ত মাঠের অভাব, সংকীর্ণ দলীয় রাজনৈতিক মনোভাব প্রভৃতি কারণে বাংলাদেশ ক্রীড়া ক্ষেত্রে পরিপূর্ণভাবে সফলতা অর্জন করতে পারছে না।
এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা, সুযোগ সুবিধা ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি, খেলোয়ারদের পেশাদারী মনোভাব এবং সর্বোপরি দেশ প্রেম।

লেখক এর মন্তব্য

বাংলাদেশের খেলাধুলায় অবস্থান কখনো উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো আবার কখনো ততটাই ম্রিয়মান।খেলাধুলার মানকে উন্নত করার জন্য সরকারি বা বেসরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। সেই সাথে খেলোয়ারদের কঠোর অনুশীলন এবং চর্চা করে যেতে হবে।
বাংলাদেশে অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় রয়েছে। তারা দেশের জন্য বয়ে এনেছে গৌরব এবং সম্মান।যা বিশ্ব সম্পর্ক স্থাপনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
এতক্ষণ ধরে আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। এরকম তথ্যবহুল বা আপনার কাছে ভালো লাগা আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েব সাইটটি বারবার ভিজিট করুন, কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন এবং শেয়ারের মাধ্যমে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url