ইউটিউব থেকে আয় করার উপায় গুলো কিকি? এবং এটি হালাল না হারাম।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সার্চ ইঞ্জিন গুগলের অন্যতম একটি পরিষেবা হলো ইউটিউব। সারা বিশ্বের যতগুলো সোশ্যাল মিডিয়া রয়েছে, যতগুলো সামাজিক মাধ্যম রয়েছে তার মধ্যে ইউটিউব এর স্থান দ্বিতীয়। মানুষের হাতে হাতে এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন থাকায় এবং ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে ইউটিউব এখন মানুষের হাতের নাগালে।
আর এই সহজলভ্যতার কারণে মানুষ ইউটিউব থেকে আয় করার উপায় বের করেছে। একটি পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, মানুষ প্রতিদিন গড়ে অন্তত ৪০ মিনিট করে ইউটিউব ভিডিও দেখে থাকে। আর এই পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় যে, প্রতিদিন সারা বিশ্বে মানুষ প্রায় দুইশত ঘন্টা ইউটিউব ব্যবহার করে থাকে।
ভূমিকা
ইউটিউব শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়াতে সীমাবদ্ধ নেই বরং এখন মানুষের ইনকামের একটি বড় প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে YouTube। সারা বিশ্বে বহু মানুষ ইউটিউব ব্যবহার করে লক্ষ লক্ষ ডলার ইনকাম করছে। আমাদের দেশে ও অনেক বেকার যুবক এখন ইউটিউব ব্যবহার করে স্বাবলম্বী হচ্ছে। বিভিন্ন উপায়ে তারা YouTube ব্যবহার করে লক্ষ লক্ষ ডলার ইনকাম করছে।
ইউটিউব থেকে আয় করার উপায়
অনলাইন ইনকামের একটি প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে ইউটিউব। এই প্লাটফর্ম থেকে সহজেই প্রচুর পরিমাণে টাকা ইনকাম করা যায়। আর এ কারণে ইউটিউবকে অনেকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ইনকাম করার জন্য ইউটিউব এর চেয়ে সহজ আর কোন মাধ্যম হয়তো নেই অনলাইন জগতে।
আপনিও কি অনলাইন থেকে ইনকাম করতে চান? আপনি কি নতুন শুরু করতে যাচ্ছেন? আপনি কি ইউটিউবার হতে চান? আপনার যদি প্রবল ইচ্ছা থাকে, যদি সত্যিই আপনি ইউটিউব থেকে আয় করতে চান তাহলে এই কনটেন্টটি আপনার জন্য।
YouTube থেকে আয় করার উপায় সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
ইউটিউব থেকে আয় করার জন্য যা যা প্রয়োজনঃ
ক) ল্যাপটপ, কম্পিউটার এবং একটি এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন
খ) ইন্টারনেট সংযোগ
গ) HD কোয়ালিটির ভিডিও ধারণ করার মতো ভালো মানের ক্যামেরা
ঘ) একটি ইউটিউব চ্যানেল
ঙ) এডসেন্সের অনুমোদন
চ) চ্যানেলে ১০০০ সাবস্ক্রাইবার , ৪০০০ ঘন্টা ভিডিও ওয়াচ টাইম এবং ১০ হাজার ভিউ
ছ) ভিডিও এডিটিং এর অভিজ্ঞতা
জ) ভালো মানের প্রচুর ভিডিও
ভিডিও তৈরি করে কিভাবে ইউটিউব থেকে আয় করা যায়
বর্তমান সময়ে অনেকেই ভিডিও তৈরি করে এডসেন্সের মাধ্যমে ইউটিউব থেকে আয় করছে। আমাদের দেশে অনেক ইউটিউবার রয়েছে যারা বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিও বানিয়ে ইউটিউবে আপলোড করে লক্ষ্য লক্ষ্য টাকা ইনকাম করছে।
ইউটিউব থেকে ভিডিও বানিয়ে ইনকাম করার জন্য প্রথমে একটি ক্যাটাগরি নির্বাচন করতে হবে। যে বিষয়ে আপনি ভালো পারেন সে বিষয়ে ভিডিও তৈরি করতে হবে। তবে ভিডিও তৈরি করার পূর্বে অবশ্যই High resolution ক্যামেরা ব্যবহার করতে হবে। ভিডিওটি যেন HD কোয়ালিটি হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
কেননা ভিডিওটি HD কোয়ালিটি না হলে ভিজিটররা ভিডিওটি দেখতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করবেন না। ভিডিওটির কোয়ালিটি ভালো না হলে ভিজিটররা ভিডিওটিতে প্রবেশ করার পর ভিডিওটি দেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। ফলে ভিজিটররা ভিডিওটি ক্লিক করে বের হয়ে চলে আসবে।
ভিডিও ধারণ করার পর ভিডিওটিতে যে ত্রুটিগুলো রয়েছে সেগুলো এডিট করতে হবে। ভিডিও রেকর্ড করার পর সাধারণত যে সমস্যাগুলো হয় তা হলঃ
- সাউন্ড সিস্টেম পরিষ্কার থাকে না
- আউট লুকিং সুন্দর থাকে না
- বাইরের অনেক নয়েজ থাকে
ভিডিও এডিটিং বা প্রফেশনাল মানের ভিডিও তৈরি
বর্তমান সময়ে ভিডিও এডিটিং এর অনেক সফটওয়্যার বা অ্যাপস রয়েছে। যার মাধ্যমে ধারণকৃত ভিডিও খুব সহজেই সুন্দরভাবে এডিট করা যায়। এসব অ্যাপসের মাধ্যমে ভিডিওতে কোন নয়েজ থাকলে তা দূর করা যায় এবং সাউন্ডে কোন সমস্যা থাকলে সহজেই তা দূর করা যায়।
এছাড়া ভিডিওটিতে পছন্দ মত সাউন্ড বা ভয়েজ অ্যাড করা যায়। বিভিন্ন গ্রাফিক্স ব্যবহার করে ভিডিও লুকিং সুন্দর করা যায়।তবে ভিডিও থেকে ইনকাম করতে হলে ভিডিওটি অবশ্যই প্রফেশনাল মানের হতে হবে। এজন্য বলা যায় ইউটিউব থেকে আয় করার উপায় গুলোর মধ্যে ভিডিও এডিটিং অন্যতম উপায়।
ইউটিউব থেকে আয় করার জন্য প্রথমে একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করতে হবে। চ্যানেল তৈরি করা হয়ে গেলে যে ভিডিও গুলো মানুষ বেশি দেখে সেই ভিডিও তৈরি করে চ্যানেলে আপলোড করতে হবে। চ্যানেলের ওয়াচ টাইম এবং সাবস্ক্রাইবার বাড়াতে হবে।সাধারণত যেই ভিডিওগুলো মানুষ বেশি দেখে সেগুলো হলঃ
ক) ফানি ভিডিও
খ) রান্নার ভিডিও
গ) শিক্ষনীয় ভিডিও
ঘ) কার্টুন ভিডিও
ঙ) ইসলামিক ভিডিও
চ) প্রাণীদের ফানি ভিডিও
ছ) টিউটোরিয়াল ভিডিও
কি কি উপায়ে ইউটিউব থেকে আয় করা হয়
ইউটিউব থেকে আয় করার উপায় বিভিন্ন হয়ে থাকে। ইউটিউব থেকে আয় করার উপায় গুলো বর্ণনা করলে আপনি বুঝতে পারবেন যে YouTube থেকে আয় সম্পূর্ণ হারাম নাকি কিছু হালাল ইনকাম ও রয়েছে। ইউটিউব থেকে আয় করার উপায় গুলো নিচে দেওয়া হলঃ
ক) YouTube চ্যানেল বিক্রি করে আয়
খ) এডসেন্স এর মাধ্যমে আয়
গ) ইউটিউবে নিজের কোন পণ্য বিক্রি করার মাধ্যমে আয়
ঘ) ইউটিউবে ট্রেডিং দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার মাধ্যমে ইনকাম
ঙ) অন্যের প্রোডাক্ট রিভিউ ভিডিও তৈরির মাধ্যমে ইনকাম
ইউটিউব থেকে আয় করার উপায় গুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল এডসেন্স। ইউটিউব থেকে যে ইনকামগুলো হয় তার বেশিরভাগই আসে এডসেন্স থেকে। এডসেন্স এর মাধ্যমে ইউটিউব থেকে যে ইনকাম হয় ইসলামিক স্কলাররা সেগুলোকে হারাম হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তারা এর কারণ ও ব্যাখ্যা করেছেন।
ইউটিউব থেকে আয় হালাল নাকি হারাম সে সম্পর্কে আমাদের দেশের ইসলামিক স্কলারদের মধ্যে থেকে তিনজনের বক্তব্য নিচে তুলে ধরা হলোঃ
- মিজানুর রহমান আজহারীর বক্তব্য-
গুগল এডসেন্স এর মাধ্যমে ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করা, দেখা যাচ্ছে যে, তাফসির মাহফিলে ওনারা অ্যাড জুড়ে দেন।
তাফসির মাহফিলের আলোচক হয়তো অশ্লীলতার বিরুদ্ধে ওয়াজ করছিলেন, কিন্তু তার ঠিক ওয়াজের মাঝখানে ৭ মিনিট পরেই একটি অশ্লীল ভিডিও চলে আসলো, তো ইউটিউব ওনারা যেটা করেছে, এটা শুধুমাত্র কমার্সিয়াল ওরিয়েন্টেড একটা চিন্তা থেকেই উনারা করেছে।
এখন এটা জায়েজ হবে কিনা? সংক্ষেপে উত্তর দিচ্ছি-না , এটা জায়েজ হবে না। এই অশ্লীল এড দেওয়ার জন্য এই ইনকাম জায়েজ হবে না।
- আহমদ উল্লাহর একটি বক্তব্য থেকে হুবহু তুলে ধরা হলো-
অনেকে ইসলামিক চ্যানেল ওপেন করেন, আলেম-ওলামাদের লেকচার গুলো আপলোড করেন এবং প্রচুর পরিমাণে ভিউয়ারদের টানার চেষ্টা করেন, সাবস্ক্রাইবার টানার চেষ্টা করেন, এরপরে তিনি এডসেন্স এর মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে টাকা ইনকাম করেন।
YouTube চ্যানেল এডসেন্স এর মাধ্যমে টাকা ইনকাম করা জায়েজ নেই।
যে কারণে জায়েজ নেই তা হলো-youtube চ্যানেলে আপনি যদি এডসেন্স অপশন ওপেন করেন তাহলে সেক্ষেত্রে ইউটিউব কর্তৃপক্ষ বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যে অ্যাডভার্টাইজগুলো দিবে সেসব এডভার্টাইজ বৈধ এডভার্টাইজ নয়।
এখানে নারীর দেহ প্রদর্শিত হবে, মিউজিক আসতে পারে, এখানে হারাম জিনিসের অ্যাডভার্টাইজ হতে পারে।
আপনার চ্যানেলের মাধ্যমে আপনি হারাম অ্যাডভার্টাইজ এ সহযোগিতা করলেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন- অন্যায় করা এবং অন্যায় কাজে সহযোগিতা করা সমান।
এখান থেকে অনেকে গানের গুনাহে লিপ্ত হচ্ছে বা চোখের যেনায় লিপ্ত হচ্ছে। বিধায় আপনাকে এটার দাই ভার বহন করতে হবে।
এ কারণেই এডসেন্সের মাধ্যমে ইউটিউব চ্যানেল থেকে টাকা কামাই করা জায়েজ নেই।
- মতিউর রহমান মাদানীর বক্তব্য-
আমাদের কাছে সমস্যা এই YouTube এর ফিতনায়, এই পয়সা ইনকাম করায় ফিতনা বা দুইটি ক্ষতিকর দিক রয়েছে।
এদের একটা হচ্ছে এতে বিভিন্ন নোংরা এডগুলো চলে আসছে। সেটা আমাদের কল্পনাতেও ছিল না, আস্তে আস্তে টেকনোলজি বাড়ছে তো নলেজ বাড়ছে।
কখনো মিউজিক চলে আসছে , কখনো অর্ধনগ্ন মহিলার ছবি চলে আসছে ইত্যাদি ইত্যাদি।
এটা একটি বড় ফিতনা। একটা লোক ওয়াজ শুনতে চাচ্ছে, দিনের কথা তোহিদ সুন্নাত শুনতে চাচ্ছে কিন্তু সেখানে নোংরা এডগুলো চলে আসছে। এগুলো মানুষের চরিত্র, ঈমান, আমল কে নষ্ট করে দিচ্ছে।
ইউটিউব থেকে আয় সম্পর্কে তিনজন ইসলামিক স্কলারের বক্তব্য থেকে বুঝা যায় যে ইউটিউব থেকে যে আয় করা হয় এডসেন্স এর মাধ্যমে তা হালাল হচ্ছে না বা জায়েজ নয়।
ইউটিউব থেকে আয় হালাল নাকি হারাম
কন্টেন্ট হালাল হতে হবে যে প্রোডাক্টের এড দেওয়া হচ্ছে সেটা হালাল হতে হবে এবং এডভার্টাইজমেন্ট টা কিভাবে করা হচ্ছে এবং এটার প্রেজেন্টেশনটা কেমন সেটাও হালাল হতে হবে।
যেটার অ্যাড দেওয়া হচ্ছে সেটা যদি হালাল হয় এবং সেখানে যদি অশ্লীল কোন মেসেজ, ক্ষতিকর কোন মেসেজ বা কথাবার্তা না থাকে, অশ্লীল কোন নারীর দৃশ্যায়ন না থাকে। এইসব শর্তসাপেক্ষে গুগল এডসেন্স এর মাধ্যমে যে টাকা উপার্জন করা হয় সেটা জায়েজ হবে।
আর তা না হলে কনটেন্ট যদি হারাম হয়, এডভেটাইজমেন্টের দৃশ্যায়ন যদি হারাম হয়, ক্ষতিকর কোন মেসেজ যদি থাকে এগুলোর মাধ্যমে এড যোগ করে যে টাকা ইনকাম করা হয় সেটা আসলে শারিয়াত অনুযায়ী জায়েজ হবে না।
তবে ভালো এড দেওয়ার মাধ্যমে যে টাকা উপার্জন করা হয় সেটা জায়েজ হবে ইনশাআল্লাহ। আশা করি আপনারা সবাই বুঝতে পেরেছেন।
লেখকের মন্তব্য
পরিশেষে বলা যায়, মুসলমান কখনো হারাম ইনকাম করতে পারেনা। প্রকৃত মুমিন যারা, তারা অবশ্যই তাদের ইনকাম হালাল হচ্ছে কিনা হারাম হচ্ছে এটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে।কেননা মহান আল্লাহ তায়ালা, এবাদত কারীর এবাদত কবুল করবেন না তার ইনকাম হালাল না হলে। তাই একজন মুমিন বান্দা যেকোনো উপায়ে ইনকাম করুক না কেন তাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে ইনকাম টি হালাল উপায়ে হচ্ছে কিনা।
এতক্ষণ ধরে আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। এরকম তথ্যবহুল বা আপনাদের কাছে ভালো লাগা আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েব সাইটটি ভিজিট করুন, কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন এবং শেয়ার এর মাধ্যমে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url