আদা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আদা সারা বিশ্বের মানুষের রান্নাঘরে গুরুত্বপূর্ণ মসলা গুলোর একটি। আজকে আমরা আদা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো ইনশাআল্লাহ। আদার মসলাদার এবং সতেজ স্বাদটি রান্নার একটি প্রধান উপকরণ।
আদা শুধু মসলা হিসেবেই নয় বরং হাজার বছর ধরে আদা একটি নিরাময়কারী প্রতিনিধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে বিভিন্ন চিকিৎসায়। আদার মধ্যে রয়েছে জিঞ্জেরল, শোগাওল, জিঞ্জিবেরিন সহ প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ। নিয়মিত আদা খাওয়ার অভ্যাস আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
ভূমিকা
আদা মূলত মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মসলা হলেও আদা রয়েছে অনেক ভেষজ গুন। আদা কাঁচা, রান্না করে এবং চা এর সাথে খাওয়া হয়। যেভাবে খাওয়া হোক না কেন, আদা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। নানা রোগ নিরাময় এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর এই আদা। তাইতো উপকারী ভেষজ হিসাবে আদার খুব নাম ডাক।
আদা খাওয়ার উপকারিতা
আদা আমাদের দারুন উপকারি একটি খাদ্য উপাদান। আদার মধ্যে রয়েছে দারুণ উপকারী গুণ। চলুন জেনে আসি আদা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে-
১) মাইগ্রেন, সাইনাস, গলা বা মাথাব্যথা হলে লবণ দিয়ে আদা চিবিয়ে খেলে এসব ব্যথা কমে যায়। দিনে দুই বেলা এক চামচ আদার রস, লেবুর রস ও মধু গরম পানিতে চায়ের মত করে খেলে মাইগ্রেন বা মাথা ব্যথা দূর হয়।
২) যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তারা আদা চায়ের মতো করে খেতে পারেন। কেননা আদা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
৩) আদা আমাদের জন্য এমন একটি উপকারী উপাদান যা আমাদের পেটের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তারা আদা খেলে খুব উপকার পাবে। এছাড়া আদা খাওয়ার নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই। কাঁচা, রান্নার সাথে বা চায়ের সাথে যেভাবেই হোক না কেন আদা খাওয়ার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না।
আরো পড়ুনঃ পালং শাকের উপকারিতা এবং অপকারিতা
৪) আমাদের অনেক সময় হঠাৎ করে কাশি বা গলা ব্যথা শুরু হয়ে যায়। এ অবস্থায় দ্রুত আদা খেয়ে নিলে এই সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়। কেননা আদা ঠান্ডা কাশি এবং গলা ব্যাথার ঘরোয়া একটি মেডিসিন। আপনার যদি কখনো ঠান্ডা কাশি বা গলা ব্যথা হয়, সাথে সাথে আদা খেয়ে নিলে বুঝবেন আদা খাওয়ার উপকারিতা কত।
৫) আদা দেহের শর্করা এবং চিনির পরিমাণ হ্রাস করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আদা একটি উপকারী খাদ্য হিসেবে কাজ করে। এছাড়া আদা শরীরে ইনসুলিন তৈরি করতে সাহায্য করে।
৬) আদায় থাকা ভিটামিন বি ৬ পায়খানা জনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। তাই যারা মলমূত্র বা পায়খানা সমস্যায় ভুগছেন তারা আদা খেতে পারেন।
৭) অনেক মেয়েদের মাসিকের সমস্যায় অনেক ব্যথা হয়ে থাকে। আর এই সমস্যা সমাধানের জন্য আদা খেতে পারেন। আদা দিয়ে চা খেলে মাসিকের ব্যথা কমে যাবে।
৮) গবেষণায় দেখা গেছে যে, আদায় থাকা উপাদান ক্যান্সার সৃষ্টি করা কোষ ধ্বংস করতে সাহায্য করে। যার ফলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
৯) শরীরে জ্বর জ্বর বা বমি বমি ভাব হলে ৬ থেকে ৭ বার আদার রস চায়ের সাথে মিশিয়ে খেলে শরীরে সুস্থ বোধ হয়।
১০) আজ আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়াও শরীরের কোথাও ক্ষত হলে তা সারাতে সাহায্য করে।
এছাড়াও আদা খাওয়ার উপকারিতা আরো অনেক রয়েছে। এখানে আদার কয়েকটি বিশেষ উপকারিতা তুলে ধরা হয়েছে মাত্র।
আদা খাওয়ার অপকারিতা
আদা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে। উপরে আমরা আদা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা আদা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জানব। চলুন জেনে আসি আদা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে-
১) গর্ভাবস্থায় আদা খেলে প্রিম্যাচিউর বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই গর্ভাবস্থায় আদা খাওয়া উচিত নয়।
২) আদা চা বেশি খাওয়ার ফলে অনিদ্রার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৩) যারা ডায়াবেটিক্স এবং রক্তচাপের ওষুধ খেয়ে থাকেন তাদের জন্য আদা খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো। কেননা আদা খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ বেশি কমে যেতে পারে যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
৪) বেশি পরিমাণে আদা খেলে হৃদযন্ত্রের গতি বেড়ে যায়।
৫) বেশি পরিমাণে আদা খেলে ডায়রিয়ার এবং পেট ব্যথা বাড়তে পারে।
৬) অতিরিক্ত আদা খেলে ত্বকের সমস্যা ও দেখা দিতে পারে।
উপরের বর্ণনা থেকে দেখা যায় যে, আদা খাওয়ার উপকারিতা যেমন রয়েছে তেমনি অপকারিতাও রয়েছে। তবে আদার অপকারিতার পরিমাণ সামান্য। তবে অতিরিক্ত আদা না খেয়ে নিয়ম মেনে আদা খেলে আদা আমাদের জন্য উপকারী হবে।
আদা খাওয়ার নিয়ম
বিশেষ কোনো আদা খাওয়ার নিয়ম নেই। সাধারণত আমরা আদা মসলা হিসেবে বেশি খেয়ে থাকি। বিভিন্ন ধরনের মাংস রান্না, মাছ রান্না এছাড়াও বিভিন্ন রান্নায় আমরা আদা ব্যবহার করে থাকি। তবে আদা খাঁচা খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
আদা রান্না করে খেলে আদার যে উপকার তা সামান্য পরিমাণে পাওয়া যায়। আদা থেকে সম্পূর্ণ উপকার বা এর ঔষধি গুন পেতে হলে নিয়ম অনুযায়ী এটি খেতে হবে। আদা খাওয়ার নিয়ম অনুযায়ী এটি ছেচে বা পিষে খাওয়া উচিত। এছাড়া লিকার চায়ের সাথে আদা পিষে অথবা টুকরো করে কেটে কাঁচা খাওয়া যায়।
অনেকেই আদা পিষে ফ্রিজে রেখে খান। এভাবে ফ্রিজে রেখে আদা খাওয়া উচিত নয়। কেননা ফ্রিজে রেখে দিলে আদার ওষুধি গুণ নষ্ট হয়ে যায়।
পুরুষের জন্য আদার উপকারিতা
পুরুষের অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্য অভ্যাসের কারণে দিন দিন নারীর পাশাপাশি পুরুষের মধ্যেও বাড়ছে বন্ধ্যাত্বের সমস্যা। একটি গবেষণা পথে দেখা গেছে যে, কিছু কিছু দেশে পুরুষের মধ্যে শুক্রাণুর সংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে।
গবেষণাটি এশিয়া, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যাগত পরিবর্তনের সংগৃহীত তথ্যের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়েছিল। ওই গবেষণায় দেখা যায় যে, ২০০০ সাল থেকে এই তিন মহাদেশের পুরুষদের শুক্রানুর সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে।
সুতরাং পুরুষদের শুকড়ানো সংখ্যা বাড়াতে এবং তার গতিশীলতা বাড়াতে আদা অত্যন্ত কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া পুরুষদের শুক্রানুর সংখ্যা বাড়াতে সহায়ক হতে- ভিটামিন, ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্য এবং অন্যান্য জীবনধারা পছন্দের সমন্বয়ে চেষ্টা করা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরুষদের উর্বরতা সংক্রান্ত সমস্যার জন্য আদা ওষুধের মত কাজ করে। যেসব ব্যাক্তি স্বল্পতার সমস্যায় ভুগছেন তাদের আদা খাওয়া উচিত। আদার প্রভাবে শরীরের তাপমাত্রা আংশিক বৃদ্ধি পায় যা শুক্রাণু উৎপাদনে সাহায্য করে।
এছাড়া আদার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। যা শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। দুর্বল, অক্ষমতা এবং ইরেক্তাইল ডিসফাংশনের বিরুদ্ধেও আদা অত্যন্ত কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।
তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, যেসব পুরুষ যৌন সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য আদা একটি কার্যকর ভেষজ প্রতিকার হতে পারে। এছাড়াও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আদা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শরীরের ক্রমবর্ধমান মেদ কমাতে আদা সাহায্য করে। তাই বলা যেতে পারে পুরুষের জন্য আদার উপকারিতা অনেক।
খালি পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা
পেটের জন্য আদা খুবই উপকারী। খালি পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা ও অনেক। খালি পেটে আদা পানি খেলে হজম শক্তি বাড়ে। ফলে বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটের ফোলা ভাব, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া সহ পেটের যেকোনো সমস্যা সমাধানে আদা খুব কার্যকরী একটি উপাদান।
এছাড়াও আদা আমাদের শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। যার ফলে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের মতো রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। আদা আমাদের হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
লেখক এর মন্তব্য
উপরের আলোচনার মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম আদা আমাদের কি কি উপকারে আসে। তবে যেকোনো জিনিসেরই একটা নির্দিষ্ট পরিমাপ থাকে। তাই আমাদের উচিত নির্দিষ্ট পরিমাণমত খাওয়া, যাতে করে এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আমাদের শরীরে ইফেক্ট না ফেলে।
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ ধরে আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। এরকম মূল্যবান এবং আপনার পছন্দের আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েব সাইটটি ভিজিট করুন, কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন এবং শেয়ারের মাধ্যমে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url