গরুর দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা

গরু একটি গৃহপালিত প্রাণী আর প্রোটিন এবং পুষ্টির অন্যতম উৎস হচ্ছে এই গরুর দুধ। গরুর দুধের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা সবাই কম বেশি জানি। আজকে আমরা গরুর দুধের উপকারিতা, পুষ্টিগুণ এবং গরুর দুধের অপকারিতা সম্পর্কে জানবো।
গরুর দুধের উপকারিতা

গরুর দুধ আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী পানীয়। ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির মধ্যে অনেকেই দুধ খেতে পছন্দ করেন না। কিন্তু এই দুধ আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তাই দুধকে সুপার ফুড বা সর্বগুণ সম্পন্ন খাবারও বলা হয়।

ভূমিকা

গরুর দুধ পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি আদর্শ খাবার। ঠান্ডা বা গরম উভয় প্রকার দুধে পুষ্টিগুণ একই থাকে। কিভাবে দুধ পান করলে দুধের কার্যকারিতা বেশি হবে তার সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্যের অবস্থার ওপর। গরুর দুধে প্রায় সব ধরনের ভিটামিন এবং মিনারেলস থাকে। তাইতো গরুর দুধকে আদর্শ খাবার বলা হয়।

গরুর দুধের উপকারিতা

আপনি জানলে অবাক হবেন, আমাদের শরীরের জন্য গরুর দুধের উপকারিতা কি কি? গরুর দুধে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। চলুন এক নজরে জেনে আসি গরুর দুধের উপকারিতা সম্পর্কে-
  • হার ও পেশীকে শক্তিশালী করতেঃ গরুর দুধে থাকা ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের হাড় এবং পেশিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। আমাদের শরীরের হাড় মজবুত এবং শক্তিশালী করতে প্রতিদিন নিয়ম করে একগ্লাস করে দুধ খাওয়া উচিত।
  • শরীরের শক্তি জোগাতে এবং ক্লান্তি দূর করতেঃ অনেকেই হয়তো জানে না যে, দুধ খেলে শরীরের ক্লান্তি ভাব দূর হয় এবং শরীরে শক্তি সঞ্চয় হয়।
  • আমাদের ব্যস্তময় জীবনের প্রতিদিনের ক্লান্তি দূর করতে এবং শরীরের শক্তি জোগাতে আমরা নিয়মিত গরুর দুধ খেতে পারি। কেননা গরুর দুধে রয়েছে ভিটামিন, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম এবং ফসফরাস সহ আরো অনেক পুষ্টিগুণ।
  • ফিটনেস ভালো এবং সুস্থ রাখতেঃ ফিটনেস ভালো রাখতে আমরা জিম, জগিং আরো কত কিছুই না করে থাকি। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা স্বাস্থ্যকর খাবারই হল শরীর সুস্থ রাখার একমাত্র উপায়। এসব স্বাস্থ্যকর খাবারের মধ্যে দুধ অন্যতম। আমাদের শরীকে সুস্থ এবং সাথে থাকতে প্রতিদিন একগ্লাস করে দুধ খাওয়া উচিত।
  • মানসিক চাপ কমাতেঃ আমাদের মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে দুধে থাকা পুষ্টিগুণ। আমরা অনেক সময় দুশ্চিন্তা করি বা মানসিকভাবে ভেঙে পরি। নিয়মিত দুধ খাওয়ার ফলে আমাদের এই সমস্যাগুলো দূর হয়ে যাবে এবং আমাদের শরীর তাজা থাকবে। তাই ছোট থেকে প্রাপ্তবয়স্ক আমাদের সবারই নিয়মিত দুধ খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
  • শরীরের ওজন কমাতেঃ যারা শরীরের ওজন কমানোর চিন্তায় আছেন, তারা নিয়মিত দুধ খাওয়ার ফলে শরীরের ওজন কমাতে পারেন। কেননা নিয়মিত দুধ খাওয়ার ফলে শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • হার্ড ভালো রাখতেঃ নিয়মিত দুধ পান করলে আমাদের হার্ট ভালো থাকে। কম ফ্যাট যুক্ত দুধ আমাদের শরীরে ভালো কোলেস্টেরলের সংখ্যা বাড়ায় এবং খারাপ কোলেস্টেরলের সংখ্যা কমাতে সাহায্য করে। তাই আমাদের হাটকে ভালো রাখতে প্রতিদিন দুধ পান করা উচিত।
  • ডায়াবেটিসের সমস্যা কমাতেঃ গরুর দুধের উপকারিতার মধ্যে এটি অন্যতম। ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি তে ভরপুর গরুর দুধ। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কম ফ্যাট যুক্ত দুধ খাওয়ার ফলে এই সমস্যা কমে যেতে পারে।
  • পেটের সমস্যা ও এসিডিটি কমাতেঃ পেটের সমস্যার সমাধানে এবং এসিটিটি কমাতে গরুর দুধের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবেনা। ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি পেটের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। তবে অবশ্যই কম ফ্যাট যুক্ত দুধ খেতে হবে।
  • রাতে ভালো ঘুম হয়ঃ অনেকেই অনিদ্রার সমস্যায় ভুগেন। রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস গরম দুধ খেয়ে দেখুন রাতে ভালো ঘুম হচ্ছে। রাতে ভালো ঘুম হওয়ার জন্য গরুর দুধ খুবই উপকারী।
  • দাঁত ভালো রাখতেঃ দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা হারের পাশাপাশি দাঁতের ক্ষয় রোধ করে এবং দাঁতকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
  • শরীরের ক্যালসিয়ামের অভাব দূর করেঃ অনেকেই ক্যালসিয়ামের অভাবে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগেন। আমরা প্রত্যেকেই জানি যে গরুর দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। তাই নিয়মিত গরুর দুধ খাওয়ার ফলে শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব দূর করা যেতে পারে।
  • ব্লাড প্রেসার ঠিক রাখতেঃ নিয়মিত গরুর দুধ ফেলে আমাদের শরীরের ব্লাড প্রেসার ঠিক থাকে।
  • স্ট্রেস দূর করতেঃ বিভিন্ন রিচার্জে জানা যায় যে দুধ ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। তাই যারা ট্রেজে ভুগছেন তারা নিয়মিত দুধ খেয়ে একগ্লাস করে দুধ পান করুন।
  • ত্বক পরিষ্কার ও উজ্জ্বল রাখতেঃ আমাদের ত্বক ভালো রাখতে দুধের ভূমিকা অনেক। কম ফ্যাট যুক্ত দুধে থাকে ট্রাই গ্লিসারাইড যা ত্বকের ফাটা রোধ করে। এছাড়াও নিয়মিত ত্বকে দুধ লাগালে ত্বকের অতিরিক্ত তেল কমে যায়।
  • চুলকে স্বাস্থ্যকর রাখতেঃ নিয়মিত দুধ খাওয়ার ফলে আমাদের চুল স্বাস্থ্যকর এবং সুন্দর হয়ে ওঠে। এছাড়া চুলে ব্যবহৃত নানা প্রোডাক্ট দুধ দিয়ে বানানো হয়।
  • হজম শক্তি বাড়াতেঃ আমাদের পাকস্থলী পরিষ্কার রাখতে দুধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দুধ পানীয় খাবার হওয়ায় এটি খুব সহজে আমাদের পাকস্থলী পরিষ্কার করতে পারে। এছাড়াও যারা হজমের সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত দুধ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
  • ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেঃ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, দুধ অভারিয়ান ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। দুধে থাকা ভিটামিন ডি শরীরের কোষের বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই আমাদের সবার জন্যই নিয়মিত দুধ পান করা ভালো।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেঃ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গরুর দুধের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। গরুর দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং ক্যালসিয়াম যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • উপরের আলোচনা থেকে আমরা আমাদের শরীরের জন্য গরুর দুধের উপকারিতা কতখানি তা জানলাম। এছাড়াও গরুর দুধের আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে। এজন্যই ডাক্তাররা শিশুদের গরুর দুধ খাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন। শুধু শিশুই নয় বরং সব বয়সের লোকের জন্যই গরুর দুধ খাওয়া প্রয়োজন।

গরুর দুধের অপকারিতা

উপকারিতার পাশাপাশি গরুর দুধের অপকারিতা ও রয়েছে। চলুন জেনে আসি গরুর দুধের অপকারিতা সম্পর্কে-
  • কিডনিতে পাথর রয়েছে এমন ব্যক্তিদের দুধ খাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কিডনি রোগীদের জন্য দুধ কম খাওয়া বা দুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকায় ভালো।
  • ল্যাক্টেজ নামক এনজাইমের অভাব রয়েছে এমন ব্যক্তিদের দুধ না খাওয়াই ভালো।
  • পাকস্থলের আলসার তথা গ্যাস্ট্রিক আলসারের রোগীদের জন্য দুধ খাওয়া উচিত নয়। কেননা এসব রোগীরা দুধ খেলে তাদের ডায়রিয়া বা পেটে ব্যথা হতে পারে।
  • এলার্জি জাতীয় সমস্যা থাকলে দুধ খাবেন না। কারণ চিকিৎসকরা শরীরের এলার্জি থাকলে দুধ খেতে নিষেধ করেন। দুধে এলার্জি আছে বলে মনে করা হয় যা এলার্জি রোগীর সমস্যা আরো বাড়াতে পারে।
  • সবেমাত্র যাদের পেটে অপারেশন করা হয়েছে তাদের জন্য দুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো। তবে সুস্থ হয়ে গেলে তারা দুধ খেতে পারে।
প্রতিদিন নিয়ম করে এক গ্লাস পা ২ গ্লাস দুধ খাওয়ার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কিন্তু অনেকেই প্রতিদিন নিয়মের বাইরে যে অতিরিক্ত দুধ খেয়ে ফেলেন যা উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি করে। গরুর দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা হিসাব করে দেখা যায় যে অপকারিতার চেয়ে উপকারিতায় বেশি।

গরুর দুধের পুষ্টি উপাদান

গরুর দুধ পুষ্টিতে ভরপুর। গরুর দুধের পুষ্টি উপাদান যেগুলো রয়েছে তার মধ্যে এমাইনো এসিড, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, খনিজ পদার্থ যেমন ক্রোমেনিয়াম, আইরন, কোবাল্ট, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, আয়োডিন ও সেলিনিয়াম ইত্যাদি।
গরুর দুধের উপকারিতা

গরুর দুধে পানি ৮৬ .৫ শতাংশ, ল্যাকটোজ ৪.৮ শতাংশ, ফ্যাট ৪.৫ শতাংশ, প্রোটিন ৩.৫ শতাংশ এবং ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ ০.৭ শতাংশ রয়েছে। গরুর দুধ সব পুষ্টির উৎস এবং ভিটামিনের ভরপুর।

গরম দুধের উপকারিতা

গরম দুধ বা ঠান্ডা উভয় প্রকার দুধের পুষ্টিগুণ অপরিবর্তিত থাকে। গরম দুধের উপকারিতা নিচে দেয়া হল-
গরম দুধ তাড়াতাড়ি হজম হয়। তাই ছোটদের জন্য গরম দুধ খাওয়ায় বেশি উপকারী। গরম দুধে ল্যাকটোজের পরিমাণ কম থাকে, তাই গরম দুধ তাড়াতাড়ি হজম হয়ে যায়। ঠান্ডা দুধ তুলনামূলকভাবে ভারী হয়, তাই ঠান্ডা দুধ হজম হতে দেরি হয়।
যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে, তারা প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস গরম দুধ পান করে এই সমস্যার সমাধান করে নিতে পারেন।
দুধে এমাইনো এসিড রয়েছে, দুধ গরম হলে এই এমাইনো এসিড সক্রিয় হয়ে ওঠে। আরে অ্যামাইনো এসিড রাতে ঘুম ভালো হতে সাহায্য করে।
গরম দুধের সাথে মধু মিশিয়ে পান করলে ঠান্ডা জনিত সমস্যা দূর হয়ে যায়।
মেয়েদের পিরিয়ডকালীন ব্যথা দূর হয়ে যাবে গরম দুধের সাথে হলুদ মিশিয়ে খেলে।
ছোট শিশুদের জন্য গরম দুধের উপকারিতা অনেক। বিশেষ করে তাদের হজমের জন্য গরম দুধই খাওয়ানো ভালো। অনেকেই ঠান্ডা দুধের চেয়ে গরম দুধ খেতে বেশি পছন্দ করে।

ঠান্ডা দুধের উপকারিতা

যাদের বদহজমের সমস্যা রয়েছে তাদের কাছে গরম দুধের থেকে ঠান্ডা দুধের উপকারিতা বেশি। এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ঠান্ডা দুধের সাথে ইসবগুল মিশিয়ে খেতে পারেন।
ঠান্ডা দুধে যে ইলেক্ট্রোলাইট রয়েছে তা ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ঠান্ডা দুধ পান করলে অনেকক্ষণ আর কোন কিছু খাওয়ার আগ্রহ থাকে না এতে বেশি খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। ফলে শরীরের ওজন কম হয়।
গ্যাস্ট্রিকের রোগীদের জন্য ঠান্ডা দুধের উপকারিতা অনেক। ঠান্ডা দুধ খাওয়ার ফলে বুক ও পেটের জ্বালাপোড়া কমে যায়। তাই খাবার পরে আধা গ্লাস ঠান্ডা দুধ পান করলে ওষুধ ছাড়াই এই সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে।

লেখক এর মন্তব্য

উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা গরুর দুধের উপকারিতা, অপকারিতা, পুষ্টিগুণ এবং ঠান্ডা ও গরম দুধ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি। দুধ আমাদের শরীরের অনেক উপকার সাধন করে। তাই ছোট শিশুর পাশাপাশি বাড়তি শিশুদের জন্যও দুধ খাওয়া প্রয়োজন। সর্বোপরি সব বয়সের লোকের জন্য প্রতিদিন নিয়ম করে দুই গ্লাস দুধ খাওয়া প্রয়োজন।
এতক্ষণ ধরে আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে জানাই অত্যন্ত ধন্যবাদ। এরকম তথ্য বহুল এবং আপনার কাছে ভালোলাগা আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েব সাইটটি ভিজিট করুন, কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন এবং শেয়ারের মাধ্যমে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url