সকালে দুধ খাওয়ার উপকারিতা
স্বাস্থ্যের জন্য দুধ একটি পুষ্টিকর খাবার। দুধ মানুষ বিভিন্ন সময় খেয়ে থাকে। সকালে দুধ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। আমরা আজকে এই আর্টিকেলটিতে সকালে দুধ খাওয়ার উপকারিতা, তরল দুধের উপকারিতা, দুধের সরের উপকারিতা এসব সম্পর্কে বিস্তারিত জানব ইনশাল্লাহ।
দুধ খাওয়া মানেই আমাদের শরীরের জন্য উপকার। দুধ যেকোনো সময় নয় বরং একটা নির্দিষ্ট সময় খেলেই এর উপকারিতা সম্পর্কে ভালো জানা যাবে। কেউ কেউ রাতে দুধ খাওয়াতে ভালো মনে করেন আবার কেউবা সকালে দুধ খাওয়ার উপকারিতা বেশি এটা মনে করেন। তবে সকালে দুধ খাওয়ার উপকারিতা আপনি বেশি পাবেন।
ভূমিকা
যেসব খাবারে উচ্চ প্রোটিন রয়েছে তার মধ্যে দুধ অন্যতম। দুধে এমন কিছু পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা অন্য যেকোনো খাবারে নেই। দুধে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও রয়েছে। কারো ভিটামিনের অভাব হলে তার জন্য উত্তম খাবার হবে দুধ। শিশু, প্রাপ্তবয়স্ক এবং বৃদ্ধ সবারই প্রতিদিন নিয়ম করে কমপক্ষে এগ্লাস করে দুধ খাওয়া উচিত।
সকালে দুধ খাওয়ার উপকারিতা
দুধ আমাদের সকলেরই পরিচিত একটি খাবার। আপনি যদি দুধ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানেন তাহলে দুধ খাওয়ার প্রতি আপনার আগ্রহ আরও বেড়ে যাবে। আজকে আমরা আপনাদের সকালে দুধ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানাবো। চলুন জেনে আসি সকালে দুধ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে-
- শরীরের এনার্জি বৃদ্ধি করতেঃ সকালে দুধ খাওয়ার উপকারিতার মধ্যে একটি হচ্ছে এনার্জি বৃদ্ধি। সারাদিন কঠোর পরিশ্রমের ফলে আমাদের এনার্জি কমে যায়। প্রতিদিন সকালে দুধ খাওয়ার ফলে শরীরের এনার্জি বৃদ্ধি পায় এবং সতেজ মনে আপনি কাজ শুরু করতে পারেন।
- ত্বক সুন্দর করতেঃ অনেক কিছু করার পরেও যাদের ত্বক সুন্দর হয় না তারা প্রতিদিন সকালে দুধ পান করে তাদের ত্বককে সুন্দর এবং উজ্জ্বল করতে পারেন। নিয়মিত প্রতিদিন সকালে দুধ পান করার ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
- ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করতেঃ আমাদের শরীরের ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করার জন্য প্রতিদিন সকালে একগ্লাস করে দুধ পান করতে হবে। আর এই দুধ পান করার ফলে আপনার শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ হয় কেননা দুধে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকে।
- হজম শক্তি বাড়াতেঃ গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার জন্য রাতে দুধ খাওয়ার বদলে আপনি সকালে দুধ খেতে পারেন। কারণ সকালে দুধ খেলে আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
- শরীরে শক্তি যোগাতেঃ যারা শারীরিক পরিশ্রম করেন তাদের শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য প্রতিদিন নিয়ম করে দুধ খেতে পারেন। এতে করে আপনার শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং আপনি তরতাজা হয়ে পরিশ্রম করতে পারবেন।
দুধে রয়েছে ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম। পুষ্টিগণের সেরা খাবার হওয়ায় দুধ আমাদের সকলের সব বয়সের লোকের জন্যই খুব উপকারী।
তরল দুধের উপকারিতা
তরল দুধ কে বাষ্পীভূত করে গুড়া দুধে রূপান্তরিত করা হয়। তরল দুধের মেয়াদ কম থাকায় মানুষ ব্যবহার এবং সংরক্ষণের জন্য গুড়া দুধ বেছে নেন। মেধা বিকাশ এবং স্বাস্থ্য গঠনের জন্য দুধ একটি অত্যাবশ্যকীয় খাবার। আমরা এখানে তরল দুধের উপকারিতা সম্পর্কে জানব ইনশাআল্লাহ।
পুষ্টি বিদদেরমতে, তরল দুধে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং ভালো ব্যাকটেরিয়া দুটোই রয়েছে। তরল দুধের এই ভালো ব্যাকটেরিয়া গুলোকে রেখে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া গুলোকে ধ্বংস করার জন্য ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বা চুলা মাঝারি আছে রেখে দুধ গরম করতে হবে।এতে করে তরল দুধের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়ে যায় এবং ভালো ব্যাকটেরাগুলো জীবিত থাকে।
তরল দুধের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য আমাদের নিয়মিত দুধ খাওয়া প্রয়োজন। আমাদের শরীরে দুধের উপকারিতা পেতে তরল দুধের কোন বিকল্প নেই। তরল দুধের উপকারিতার মধ্যে রয়েছে-
- তরল দুধে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরের হাড় এবং দাঁত সুগঠিত এবং শক্ত ও মজবুত করতে সাহায্য করে।
- আমাদের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে এবং ত্বকের সুরক্ষা বজায় রাখতে তরল দুধের ভূমিকা অপরিসীম।
- আমাদের মানসিক চাপ দূর করতে তরল দুধের বিকল্প নেই।
- তরল দুধে রয়েছে প্রোটিন যা আমাদের মাংসপেশী গঠনে সাহায্য করে।
- সকালে তরল দুধ খাওয়ার ফলে আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
দুধ সব বয়সের লোকের শরীরের জন্য পুষ্টিকর একটি খাবার। কিন্তু দুধ যদি ভালো না হয় তাহলে সেটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়ে যায়। তাই আমাদের শরীরকে ভালো রাখতে খাঁটি গরুর দুধ বাছাই করতে হবে।
সকালে খালি পেটে দুধ খেলে কি হয়
সকালে খালি পেটে দুধ খেলে কি হয় এ সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। সকালে অনেকেই গরম দুধ পান করে থাকেন। এ অভ্যাস আপনাদের জন্য আরামদায়ক এবং শরীরের জন্য পুষ্টিকর হতে পারে। তবে দুধ একটা ভারি খাবার।
তাই দুধ হজম হতে অনেক বেশি সময় লাগে। আর সকালে আমাদের হজমশক্তি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম থাকে। তাই সকালে খালি পেটে দুধ খাওয়ার ফলে পেটে ব্যথা, বদহজম, গ্যাস ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
শরীরে ইনসুলিন হরমোনের মাত্রা বাড়ায় দুধে থাকা প্রোটিন। আর এই ইনসুলিন হরমোন ত্বকের তেলগ্রন্থি গুলোকে উজ্জীবিত করে ফলে ব্রণ, পিম্পল ইত্যাদি ত্বকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সকালে খালি পেটে দুধ খাওয়ার ফলে অনেক সময় এলার্জি, মাথাব্যথা এবং ক্লান্তি ভাব ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
যাদের হজম শক্তি দুর্বল বা ত্বকে এলার্জি রয়েছে তাদের জন্য সকালে খালি পেটে দুধ খাওয়া এড়িয়ে যেতে হবে তারা সকালে খালি পেটে দুধ খাওয়ার পরিবর্তে বিভিন্ন পুষ্টিপথ ফলমূল খেতে পারেন। এটা তাদের শরীরে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হয়ে যেতে পারে।
দুধের সরের উপকারিতা
দুধ 180 ডিগ্রি তাপমাত্রায় দুধ গরম করার পর দুধের ওপর এক ধরনের পাতলা ও হালকা হলুদ ভাব ক্রিমের আস্তরণ পড়ে যাকে আমরা দুধের সর বলে থাকি। ত্বকের স্বাভাবিক রং উজ্জ্বল করতে দুধের সর ব্যবহার করা হয়। দুধের সরের উপকারিতা নেচে দেওয়া হলো-
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে দুধের সর ব্যবহার করা হয়। দুধের স্বরে থাকা ল্যাকটিস এসিড ত্বকের রোদে পুড়া ভাব কমায় এবং ত্বককে প্রাকৃতিক ভাবে উজ্জ্বল করে। ত্বকের সার্বিক সুরক্ষায় দুধের স্বাদ খুব উপকারী।
আমাদের মুখের কালো দাগ সহজে দূর হতে চায় না। এ সমস্যা দূর করার জন্য মুখের কালো দাগের ওপর দুধের সর মেখে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। আরো ভালো ফলাফল পেতে দুধের সরের সঙ্গে এক টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে এই মিশ্রণটিকে ত্বকের ওপরে লাগিয়ে তা শুকিয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে এবং বয়সের ছাপ দূর করতে দুধের সর খুব কার্যকরী একটি উপাদান। দুধের স্বরে থাকা প্রোটিন এবং ভিটামিন ত্বকের কোলজেন তৈরি করে বয়সের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে।
বাসি দুধ খাওয়ার উপকারিতা
আমরা অনেকেই মনে করি দুধ বাসি হলে সেটা নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু বাসে দুধ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। প্রোবায়োটিকে পুণ্য বাসি দুধ যা আমাদের যা আমাদের স্বার্থের উন্নতি করতে সাহায্য করে।
বাসে দুধ খাওয়ার উপকারিতা এর মধ্যে আরেকটি হলো সহজেই হজম হওয়া। এছাড়াও বাসী দুধে তাজা দুধের চেয়ে ক্যালসিয়াম বেশি থাকে যা আমাদের হার ও দাঁত শক্ত মজবুত করতে সাহায্য করে।
লেখক এর মন্তব্য
দুধ আমাদের শরীরকে সুস্থ সবল সতেজ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উপরেরটা আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারি যে দুধ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। বিশেষ করে সকালে দুধ খাওয়ার উপকারিতা অনেক। এই আলোচনা থেকে আমরা আরো জানতে পারলাম যে বাসি দুধ তাজা দুধের চেয়ে বেশি উপকারী।
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ ধরে আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময় দিয়ে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। এরকম তথ্যবহুল এবং আপনার কাছে ভালো লাগা আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েব সাইটটি বেশি করে ভিজিট করুন, কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন এবং শেয়ারের মাধ্যমে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url