ছাগলের দুধ খাওয়ার উপকারিতা
ছাগল একটি গৃহপালিত প্রাণী। কিন্তু ছাগলের দুধ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই এখনো জানিনা। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ছাগলের দুধ পাওয়া যায়। ছাগলের দুধ খাওয়ার উপকারিতার পাশাপাশি ছাগলের দুধ খাওয়ার অপকারিতা সামান্য পরিমাণে রয়েছে। এই আর্টিকেলটিতে আমরা এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো ইনশাআল্লাহ।
গরু থেকে ছাগল পরিচর্যা করা অনেক বেশি সহজ। তাই ছাগলের দুধ খুব সহজেই পাওয়া যায় এছাড়াও ছাগলের দুধে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান রয়েছে। গবেষণা থেকে জানা যায় যে ছাগলের দুধ শরীরের অন্যান্য খাবার থেকে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি শোষণ করার ক্ষমতা বাড়ায়।
ভূমিকা
ছাগলের দুধ শিশুদের জন্য খুবই উপকারী। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুকে জন্মের পরে যদি বাইরের খাবার খাওয়াতে হয় তাহলে নির্ভয়ে ছাগলের দুধ খাওয়ানো যেতে পারে। কেননা ছাগলের দুধে রয়েছে প্রচুর খাদ্য গুণ। ছাগলের দুধ খাওয়ার প্রচলন প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে।
ছাগলের দুধ খাওয়ার উপকারিতা
আমাদের স্বাস্থ্য উন্নয়নে ছাগলের দুধ খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে। নানা পুষ্টি উপাদানের উৎস হিসেবে মানুষ গরুর দুধ কি বাছাই করে থাকে। কিন্তু যাদের গরুর দুধ খেলে হজমের সমস্যা হয় তারা নিঃসন্দেহে ছাগলের দুধ বাছাই করতে পারেন। কেননা ছাগলের দুধ গরুর দুধের মতই পুষ্টিকর। আসন জেনে আসি ছাগলের দুধ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে-
বিভিন্ন রোগ ব্যাধিতে ছাগলের দুধঃ ছাগলের দুধ খাওয়ার উপকারিতা এর মধ্যে অন্যতম হলো বিভিন্ন রোগ ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে ছাগলের কাঁচা দুধ খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। যেসব ব্যাক্তি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাদের রক্তে প্লাটিনেটের সংখ্যা বাড়াতে ছাগলের দুধ খুবই কার্যকর।
এছাড়াও জন্ডিসের আক্রান্ত রোগীদের জন্য ছাগলের দুধ খুব দরকারই। কেননা জন্ডিস থেকে আরোগ্য লাভের প্রাকৃতিক উপাদান বলা হয় ছাগলের দুধকে। ছাগলের দুধের অ্যান্টিবডি ক্ষমতা রয়েছে। এছাড়াও আরো অনেক রোগের ওষুধ হিসেবে ছাগলের দুধ ব্যবহার করা হয়।
গরুর দুধের বিকল্প হিসেবেঃ গরুর দুধের বিকল্প হিসেবে আমরা ছাগলের দুধ ব্যবহার করতে পারি। কেননা ছাগলের দুধ পুষ্টি উপাদানে ভরপুর এবং আমাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ছাগলের দুধ আমাদের শরীরে অন্যান্য খাদ্য থেকে পুষ্টি উপাদান শোষণ করার ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে।
অন্ত্রের উন্নতি সাধনেঃ ছাগলের দুধ অন্ত্রের প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কেননা ছাগলের দুধে প্রদাহ নিয়ন্ত্রণকারী উপাদান পাওয়া যায়। যাদের হজমে সমস্যা হয় তাদের জন্য ছাগলের দুধ একটা উৎকৃষ্ট খাবার। কেননা ছাগলের দুধে গ্যাস্ট্রিক, এসিডিটি বা কোন হজমের সমস্যা দেখা দেয় না।
বাড়ন্ত শিশুদের জন্যঃ বারন্ত শিশুদের জন্য ছাগলের দুধ খাওয়ার উপকারিতা অনেক। ছাগলের দুধকে প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি, ভিটামিন, আইরন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের পাওয়ার হাউজ বলা হয়। ছাগলের দুধে উচ্চ মাত্রার ক্যালসিয়াম রয়েছে যা হার ও দাঁত মজবুত করতে সাহায্য করে এবং বাড়ন্ত শিশুদের শরীরে পর্যাপ্ত শক্তি যোগাতে সাহায্য করে।
ত্বকের যত্নেঃ ছাগলের দুধ শুধু আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য নয় বরং ত্বকের যত্নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ছাগলের দুধ দিয়ে প্রাকৃতিকভাবে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। এছাড়া ফেসপ্যাক, ক্লিন যার হিসাবে ছাগলের দুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। ছাগলের দুধে রয়েছে ল্যাকটিস এসিড এবং ফ্যাটি এসিড। যা আমাদের ত্বকে চকচকে উজ্জ্বল এবং সতেজ করতে সাহায্য করে।
গর্ভবতী মহিলার জন্যঃ গর্ভাবস্থায় অনেক মহিলা ভিটামিন এবং রক্তশূন্যতায় ভুগেন। তাদের এই সমস্যা তাদের গর্ভে থাকা শিশুর উপর প্রভাব ফেলে।
তাই গর্ভবতী মহিলাকে গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর এবং ভিটামিন যুক্ত খাবার হিসেবে খাদ্য তালিকায় ছাগলের দুধ রাখা যায়। কারণ ছাগলের দুধে প্রচুর ভিটামিন এবং পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এর ফলে গর্ভবতী মা এবং তার শিশু সুস্থ এবং তাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
এছাড়াও ছাগলের দুধ শরীর সচল রাখতে, শরীরে শক্তি বাড়াতে এবং সক্রিয় করতে, শরীরের দুর্বলতা কমাতে এবং মানুষের কাশি হলে কফ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ছাগলের দুধ খাওয়ার অপকারিতা
ছাগলের দুধ খাওয়ার অপকারিতা খুবই কম। ছোট শিশুদের জন্য ছাগলের দুধ খাওয়ার উপকারিতা অনেক কিন্তু ছোট শিশুদের মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি ছাগলের দুধ খাওয়ালে মায়ের বুকের দুধের ওপর তাদের অনিহা সৃষ্টি হবে। এর ফলে শিশু বিভিন্ন ধরনের রোগের সমস্যায় পড়তে পারে।
এছাড়াও অতিরিক্ত পরিমাণে ছাগলের দুধ খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের নানা রকম ক্ষতি সাধন হতে পারে। ছাগলের দুধ খাওয়ার ফলে শরীরের মধ্যে কোন সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
যদিও ছাগলের দুধ খাওয়ার অপকারিতা খুবই কম। তবুও সব খাবারই নিয়মমাফিক খেলে সেটা আমাদের শরীরের জন্য উপকার সাধন করে। আর অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে সেটা শরীরের ভালোর চেয়ে খারাপ করে বেশি।
ছাগলের দুধে কি এলার্জি আছে
দুধে এলার্জি হল দুধ এবং দুধ যুক্ত পণ্যগুলির প্রতি একটি এটিপিকাল ইমিনিউ সিস্টেম প্রতিক্রিয়া। এটি শিশুদের খাদ্য এলার্জির মধ্যে একটি। এখন প্রশ্ন হল ছাগলের দুধে কি এলার্জি আছে? গরুর দুধে এলার্জি রয়েছে কিন্তু ছাগলের দুধে কোন এলার্জি নেই।
গরু এবং ছাগলের দুধের উপকারিতা একই রকম হলেও ছাগলের দুধে ফ্যাটের পরিমাণ কম কিন্তু প্রোটিন এবং ক্যালসিয়ামের পরিমাণ অনেক বেশি।
পুষ্টির ঠিক বিবেচনা করলে দেখা যায় যে গরুর তুলনায় ছাগলের দুধে পুষ্টিগুণ বেশি। ছাগলের দুধে এলার্জি আছে কিনা এটা দেখার জন্য ছাগলের দুধ খেয়ে দেখতে হবে এলার্জি হচ্ছে কিনা। যদি অ্যালার্জি সমস্যা হয় তাহলে ছাগলের দুধ খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। আর যদি কোন সমস্যা না হয় তাহলে ছাগলের দুধ গরুর দুধের চেয়ে বেশি উপকারী।
ছাগলের দুধ বৃদ্ধির উপায়
ছাগল সুষম খাদ্য এবং সঠিক পরিচর্যা পেলে স্বাভাবিকভাবেই এর দুধ বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে ছাগল পালন করেন এমন খামারিদের সমস্যা হল ছাগলের দুধ উৎপাদন কম হচ্ছে ফলে ছাগলের বাচ্চা পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ পাচ্ছে না। ছাগলের দুধ বৃদ্ধির উপায় নিজে বর্ণনা করা হলো-
সুষম খাদ্য সরবরাহঃ গর্ভবতী সাজিকে সুষম খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। গর্ভাবস্থায় ছাগলের নিজের জন্য এবং বাচ্চার জন্য প্রচুর পরিমাণে পুষ্টির প্রয়োজন হয়। ছাগলের পুষ্টির নির্ভর করে তার দুধ উৎপাদন ক্ষমতা এবং বাচ্চার দেহ গঠন। ফলে গর্ভবতী ছাগলকে পর্যাপ্ত পরিমাণে সুষম খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
প্রসব পরবর্তী সময় ছাগলের দুধ উৎপাদনের উপর নির্ভর করে তাকে বাড়তি আরও দানাদার সুষম খাদ্য দিতে হবে এর পাশাপাশি ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, মিনারেল স এবং ভিটামিন সরবরাহ করতে হবে।
বিশুদ্ধ পানি সরবরাহঃ দেহের পরিপাকতন্ত্র সঠিক ভাবে পরিচালিত হওয়ার জন্য বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন হয়। দেহের মেটাবলিজম ঠিক রাখতে পানির প্রয়োজন। ফলে ছাগলের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
প্রসবকালে পরিচর্যাঃ গর্ভবতী ছাগলের প্রসবকালে নিতে হবে বাড়তি পরিচর্যা এবং যত্ন। এ সময় ছাগলকে নরম এবং শুকনো বিছানার ব্যবস্থা করে দিতে হবে এবং ঘর জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।
ছাগলকে গোসল করানোঃ গরমকালে ছাগলকে একবার গোসল করানো এবং শীতকালে ব্রাশ দিয়ে লোম পরিষ্কার করতে হবে। এতে করে ছাগলের দেহে রক্ত প্রবাহ ঠিক থাকে যা দুধ উৎপাদনের সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
কাঁচা ঘাস সরবরাহঃ ছাগলের দুধ উৎপাদনের কাঁচা ঘাসের কোন বিকল্প নেই। সুষম খাদ্যের পাশাপাশি কাঁচা ঘাস ছাগলের দুধ উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। কাঁচা ঘাসে ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা দুধ উৎপাদনে সাহায্য করে।
দুধ বাচ্চাকে খাওয়ানোঃ ছাগলের দুধ তার বাচ্চা কে খেতে দিতে হবে। কিছু সময় পর পর বাচ্চা যদি দুধ খায় তাহলে ওলানে বেশি দুধ নামবে। এটা ছাগলের দুধ উৎপাদনের পরিমাণ বাড়বে।
ব্যায়াম করাঃ দীর্ঘদিন বাচ্চা পেটে রাখার কারণে ছাগলগুলো অলস হয়ে যায়। তার বাচ্চা হবার পরে ছাগলকে ব্যায়াম বা হাটা চলার ব্যবস্থা করতে হবে। এর ফলে তাদের শরীর তরজা থাকবে যা দুধ উৎপাদনে সহায়ক হতে পারে।
এছাড়া ছাগলের দুধ বৃদ্ধি করার জন্য পশু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খাওয়ানো যেতে পারে।
ছাগলের দুধ থেকে কি পাওয়া যায়
ছাগলের দুধ থেকে কি পাওয়া যায় এমন প্রশ্ন আমাদের সবার মনেই হতে পারে।
ছাগলের দুধ থেকে সাধারণত পনির, মাখন, আইসক্রিম এবং ক্যাজেতা ছাড়াও আরো অন্যান্য পণ্য প্রক্রিয়াজাত করা হয়। ছাগলের পনির ফ্রান্সে ছাগলের পনির নামে পরিচিত। এছাড়াও আরো কিছু জাতের মধ্যে রয়েছে রোকামাদোর এবং মন্ট্রাচেট।
লেখকের মন্তব্য
ছাগলের দুধ ক্যালরি, প্রোটিন এবং ফ্যাটের দারুন উৎস। আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ছাগলের দুধ খাওয়ার উপকারিতা অনেক। ছাগলের দুধে গরুর দুধের চেয়ে বেশি পুষ্টিগুণ রয়েছে। তাই আমাদের সকলের উচিত ছাগলকে সঠিকভাবে পরিচর্যা করা। যার ফলে আমরা ছাগলের কাছ থেকে এই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাদ্য পেতে পারি।
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ ধরে আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে জানাই অত্যন্ত ধন্যবাদ। এরকম তথ্যবহুল এবং আপনার কাছে ভালো লাগা আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েব সাইটটি বেশি বেশি ভিজিট করুন, কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন এবং শেয়ারের মাধ্যমে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url