দেশ গঠনে ছাত্রদের ভূমিকা
সমাজ তথা দেশের উন্নয়ন নির্ভর করে শিক্ষিত এবং দক্ষ কর্মশক্তির ওপর। দেশ গঠনে ছাত্রদের ভূমিকা অনেক। একটি সমাজের উন্নয়ন মানেই দেশের উন্নয়ন। এই আর্টিকেলটিতে আমরা সমাজের ছাত্রদের ভূমিকা এবং দেশ গঠনে ছাত্রদের ভূমিকা সম্পর্কে জানব।
একজন ছাত্র জ্ঞানচর্চা করে নিজেকে জ্ঞানী তৈরি করে আগামীর জন্য। একটা সুন্দর জাতি গঠনের জন্য মানুষকে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। আর এই দায়িত্ব পালন করে সুখী এবং সুন্দর সমাজ এবং দেশ গঠন করতে কেবল ছাত্রসমাজই পারে। তাই আদর্শ সমাজ বা দেশ গঠন করতে সমাজে ছাত্রদের ভূমিকা অপরিসীম।
ভূমিকা
ছাত্ররাই একটি দেশের চালিকাশক্তি। যেকোনো অধিকার আদায়ের ছাত্ররাই প্রথমে এগিয়ে আসে। ছাত্ররা সমস্ত অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে একটি আদর্শ সমাজ গঠন করতে কেবলমাত্র ছাত্ররাই পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে ছাত্ররাই ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পথ সুগম করে দিয়েছিল।
দেশ গঠনে ছাত্রদের ভূমিকা
সমাজে ছাত্রদের ভূমিকা অনেক। সমাজের পাশাপাশি দেশ গঠনে ছাত্রদের ভূমিকা বলে শেষ করা যাবে না। একজন ছাত্রই পারে দেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে সাহায্য করে সুন্দর এবং আদর্শ দেশ গঠন করতে। মূর্খ জাতি কখনো বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না।
আর ছাত্র সমাজই পারে দেশটাকে নিরক্ষরতা মুক্ত করতে। পাশাপাশি বৃক্ষরোপণ, রাস্তাঘাট সংস্কার এবং মাদকাসক্তর হাত থেকে দেশের তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে একমাত্র ছাত্র সমাজই পারে। ছাত্ররা অবসর সময়ে বা ছুটির সময়ে যেমন রমজানের ছুটি, গ্রীষ্মকালীন ছুটি এবং পরীক্ষার পর ছুটি ইত্যাদিতে তারা গ্রামের নিরক্ষর মানুষকে শিক্ষার আলো দান করতে পারে।
গাছ যে কোন দেশের জন্য মহামূল্যবান একটা সম্পদ। গাছ প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে। যেকোনো দেশে শতকরা ২৫ ভাগ গাছপালা থাকা দরকার। কিন্তু সেই হিসাবে আমাদের দেশে গাছপালা বা বনাঞ্চলের পরিমাণ অনেক কম। আমাদের দেশের ছাত্র সমাজই পারে দেশটাকে সবুজের সবুজে ভরিয়ে দিতে।
এরাই পারে মানুষকে গাছের উপকারিতা সম্পর্কে জানাতে এবং গাছ কাটার ফলে পরিবেশের উপর যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে সে সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে। ছাত্ররাই পারে তাদের স্কুলের আশেপাশে, রাস্তার ধারে এবং বাড়ির আশেপাশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করতে।
বেশ গঠনে ছাত্রদের ভূমিকার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল রাস্তাঘাট মেরামত করা। আমাদের দেশে গ্রামাঞ্চলে বন্যা মৌসুমে রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যায় এবং বন্যায় রাস্তাঘাটের অনেক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। এ সময় ছাত্ররা সমাজের অন্য মানুষদের সাথে এসব সেচ্ছাসেবা মূলক কাজে অংশগ্রহণ করে সমাজ তথা দেশের উপকার সাধন করতে পারে।
এছাড়া ছাত্ররা সমাজের মানুষের কাছে স্বাস্থ্য সচেতনতা মূলক বাণী পৌঁছে দিয়ে তাদের উপকার করতে পারে। ছাত্রদের হাতে সময় খুব কম থাকে, তারা সব সময় পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত থাকে। অনেক অভিভাবক ছাত্রদেরকে শুধু পড়াশোনার মধ্যে ডুবিয়ে রাখতেই পছন্দ করেন। তাহলে তারা ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সমাজের অনেক উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে না।
প্রত্যেক অভিভাবককে এই ধরনের মন মানসিকতা খোলস থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সব অভিভাবককেই মনে রাখতে হবে যে আজকের এই ছাত্রই আগামী দিনে দেশ চালাবে। দেশ গঠনে বা দেশের উন্নয়নে ছাত্রদের উৎসাহ এবং সহযোগিতা করা উচিত। যার ফলে ছাত্রসমাজই হয়ে উঠবে দেশ গঠনের আদর্শ কারিগর।
সমাজে ছাত্রদের ভূমিকা
সমাজে ছাত্রদের ভূমিকা অপরিসীম। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামে ছাত্র সমাজের ভূমিকা অপরিসীম।
এছাড়াও ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবি সহ গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং ২০২৪ সালে বৈষম্য বিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্র সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে। ছাত্র সমাজের উচিত প্রথমে নিজেকে সঠিকভাবে গড়ে তোলা। আর একজন ছাত্রকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে প্রধান ভূমিকা পালন করে তার পরিবার।
এছাড়াও ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবি সহ গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং ২০২৪ সালে বৈষম্য বিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্র সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে। ছাত্র সমাজের উচিত প্রথমে নিজেকে সঠিকভাবে গড়ে তোলা। আর একজন ছাত্রকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে প্রধান ভূমিকা পালন করে তার পরিবার।
কেননা একজন ছাত্র তার মানবিকতা এবং মনুষত্ববোধ শিখে তার পরিবারের কাছ থেকে। পরবর্তীতে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক এর অনুপ্রেরণায় এই ভিত্তিগুলো আরো মজবুত এবং পরবর্তীতে বাস্তব জীবনে প্রয়োগের দীক্ষা গ্রহণ করে।
দেশ বা সমাজ গঠনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে একজন ছাত্রের উচিত নিজেকে জ্ঞানী, ন্যায় পরায়ন, সৎ চরিত্রবান এবং মানবিক মূল্যবোধ সম্পূর্ণ মানুষ হয়ে গড়ে ওঠা উচিত। কেননা সমাজ তথা দেশ গঠন করতে আগে নিজেকে করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের সামাজিক দায়িত্ব কি
শিক্ষার্থীদের সামাজিক দায়িত্ব কি? এমন প্রশ্নের উত্তর হিসাবে আমরা বলতে পারি শিক্ষার্থীদের সামাজিক দায়িত্ব এবং কর্তব্য অনেক। সামাজিক দায়বদ্ধতা একটি নৈতিক পরিকাঠামো যা অনুযায়ী ছাত্ররা তার সমবয়সীদের সাথে এবং অন্যান্য ব্যক্তি ও সংগঠন সমূহের সাথে একত্রে কাজ করতে পারে। এতে বৃহত্তর সমাজের সৃষ্টি হয়।
প্রতিটি ছাত্র তথা প্রতিটি ব্যক্তিই অর্থনীতি এবং বস্তু তন্ত্র গুলির সাম্য ব্যবস্থা বজায় রাখা, পরিবেশের যত্ন নেওয়া, বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে এবং বৈচিত্রকে মূল্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ।
ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে আদর্শ ছাত্র সমাজই পারে দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিতে
ইসলাম হলো একটি মানুষের পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। বাংলাদেশ একটি মুসলিম রাষ্ট্র সে হিসাবে প্রত্যেকটি ছাত্রকে ইসলামের শিক্ষা দানের যথাযথ ব্যবস্থা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে আদর্শ ছাত্র সমাজই পারে দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিতে।
মানুষের সমাজব্যবস্থা থেকে শুরু করে দেশ পরিচালনা করার সকল নিয়মকানুন আসমানী গ্রন্থ আল কুরআন মানুষের জন্য উপহার দিয়েছে। এছাড়াও পবিত্র আল কুরআন মানুষের প্রতিদিনের জীবনযাত্রা, সামাজিক, ঐতিহাসিক এবং প্রাকৃতিক আইনের মাপকাঠি নির্ধারণ করে দিয়েছে।
আল কুরান প্রকৃতি ও পৃথিবী থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার উপদেশ দিয়েছে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, " বল, পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর, অতঃপর দেখো, যারা সত্যকে অস্বীকার করেছে তাদের পরিণাম কি হয়েছিল। একজন ছাত্রকে ইসলামিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার মাধ্যমে আদর্শ দেশ এবং জাতি গঠন করা সম্ভব।
সমাজে নারীর ভূমিকা
দেশ গঠনে ছাত্রদের ভূমিকা যেমন রয়েছে পাশাপাশি নারীর ভূমিকা ও অবিস্মরণীয়। পুরুষের পাশাপাশি সমাজে নারীর ভূমিকা বলে শেষ করা যাবে না। পরিবার এবং সমাজের মেরুদন্ড হিসেবে আমরা নারীকেই বুঝি। পরিবারের যত্ন, শিশু লালনপালন এবং তাদের মেধা বিকাশের ক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা অতুলনীয়।
অতীতে নারীর কাজকর্ম সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু বর্তমানে নারীরা কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে রাজনৈতিক পর্যায়ে উন্নতি সাধন করেছে। নারীরা বর্তমানে পরিবার, প্রশাসনিক কর্মকান্ডে, অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায়, পরিকল্পনা প্রণয়নে, শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডে, গবেষণামূলক কর্মকান্ডে ইত্যাদিতে নারীরা পুরুষদের পাশাপাশি সমানভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনিরমানে ছাত্র সমাজের ভূমিকা
দেশ গঠনে ছাত্রদের ভূমিকা যেমন রয়েছে তেমনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ছাত্র সমাজের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্র সমাজকে বাদ দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা কখনোই সম্ভব নয়। ডিজিটালাইজেশন এর পর আমাদের দেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখে। আর এই স্বপ্ন পূরণ করার জন্য ছাত্র সমাজকে জ্ঞান বিজ্ঞানে উন্নত এবং স্মার্ট করে গড়ে তুলতে হবে।
প্রত্যেকটা শিক্ষার্থীকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমৃদ্ধ সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। ছাত্র-ছাত্রী ও যুব সমাজকে ধূমপান ও ধূমপানমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার জন্য একজন নিবেদিত কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। ছাত্রদের যে রাজনীতি সেটি হবে শিক্ষার্থীদের কল্যাণ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক।
পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের সূচনা থেকে আজ পর্যন্ত দেশ গঠনের ছাত্রদের ভূমিকা অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমাদের ছাত্র সমাজকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারলেই বাংলাদেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।
লেখক এর মন্তব্য
ছাত্ররাই সোনার বাংলা গড়ার কারিগর। আমাদের দেশের উন্নতি এবং অগ্রগতি অনেকাংশে ছাত্রদের উপর নির্ভর করে। ছাত্ররাই পারে তাদের ধৈর্য, পরিশ্রম, ত্যাগ এবং তিতিক্ষার মাধ্যমে সুশৃংখল এবং সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র গড়ে তুলতে। দেশ গঠনে ছাত্রদের ভূমিকা কতখানি তা আমরা এই আর্টিকেলটি থেকে জানতে পেরেছি।
প্রিয় পাঠক আশা করি আমার এই আর্টিকেল থেকে দেশ গঠনে ছাত্রদের ভূমিকা সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। এরকম আরো তথ্যমূলক বিষয় অথবা আপনার কাছে ভালোলাগা আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন, শেয়ারের মাধ্যমে আপনার বন্ধু ও পরিচিতদের পড়ার সুযোগ করে দিন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url