পালং শাকের উপকারিতা এবং অপকারিতা বিস্তারিত জানুন
পালং শাকের ইংরেজি নাম হল Spinach। আমরা আজকে পালং শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। আমাদের দেশে শীতকালে পালং শাক পাওয়া যায়। তবে সারা বছর ই পালং শাকের চাষ করা হয়। পালং শাক বিভিন্ন কীট নাশক ছাড়াই চাষ করা হয় বলেই, পালং শাকের উপকারিতা অনেক।
পালং শাককে রক্ত পরিষ্কারক খাদ্য বলা হয়। পালং শাক মানুষের অত্যন্ত পছন্দনীয় একটি শাক এবং সবজি। পালং শাকের পুষ্টিগুণ অনেক। মানুষের শরীরের জন্য পালং শাকের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না।
ভূমিকা
পালং শাক একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। পালং শাকে রয়েছে আমাদের শরীর সুস্থ রাখার জন্য প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান। পালং শাক দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি খেতেও মজা আর তেমনি আমাদের শরীরের জন্য কাজও করে দারুন।
আরো পড়ুনঃ লাউ শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা
পালং শাকের উপকারিতা অনেক রয়েছে। এটি আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পালং শাকের উপকারিতা
পালং শাকে হয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান। আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ থেকে শরীরে রক্ষা করতে আমাদের খাদ্য তালিকায় পালং শাক রাখা যেতে পারে। নিচে পালং শাকের উপকারিতা সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো-
- যাদের রক্তচাপ রয়েছে তারা নিয়মিত পালং শাক খেতে পারেন, কেননা পালং শাকে রয়েছে উচ্চমাত্রার ম্যাগনেসিয়াম যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
- দেহের ওজন কমাতে আমাদের সব সময় উচিত কম ক্যালোরি যুক্ত খাবার খাওয়া। এক্ষেত্রে আমরা পালং শাককে বেছে নিতে পারি। কেননা ১০০ গ্রাম পালং শাকের রয়েছে মাত্র ৭ কিলো ক্যালরি। তাই আমাদের দেহের ওজন কমাতে খাদ্য তালিকায় পালং শাক রাখা যেতে পারে।
- অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভোগেন। আরে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পালং শাকের ভূমিকা অপরিসীম। পালং শাক এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ। যার কারনে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পালং শাক নির্ভয়ে খেতে পারেন।
- বিভিন্ন ধরনের সবুজ শাকসবজি আমাদের চোখের জন্য খুব উপকারী। তেমনি পালং শাকে রয়েছে উচ্চমাত্রার বিটা ক্যারোটিন, যা আমাদের চোখের ছানি পড়া কমাতে সাহায্য করে।
- পালং শাকে রয়েছে ভিটামিন এ যা আমাদের ত্বকের বাইরের স্তরের আদ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। আমাদের ত্বকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে যেমন- ব্রণ, বলি রেখা পড়া এবং বয়সের ছাপ ইত্যাদি। পালং শাক ত্বকের এই সমস্যাগুলো দূর করে ত্বককে নরম এবং স্থিতিস্থাপক অবস্থা ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- পালং শাকে রয়েছে উচ্চমাত্রার আয়রন। আমাদের দেহের অক্সিজেন উৎপাদনের জন্য এটি খুবই দরকারি। এছাড়াও পালং শাকের রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ভিটামিন সি ও ই কে ত্বরান্বিত করে আমাদের শরীরের ক্লান্তি ভাব দূর করে এবং শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে।
- এছাড়াও পালং শাক আমাদের রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
- পালং শাক আমাদের শরীরে প্রদাহ জনিত সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পালং শাক এ রয়েছে নিউজেন্থিন নামক উপাদান যা আমাদের এই সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে। তাই যাদের শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা রয়েছে তারা অবশ্যই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পালং শাক রাখতে পারেন।
- প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিনেজা রয়েছে পালং শাকে যা সুস্থ কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমাদের হৃদযন্ত্রকে ভালো রাখতে প্রতিদিন পালং শাক খাওয়া উচিত।
- পালং শাক শরীরের রোগ প্রতিরোধী রক্তের শ্বেত কণিকার সঠিক মাত্রা বজায় রাখে এবং পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ। ফলে আমাদের দেহে বিভিন্ন সংক্রমণ এবং রোগ থেকে রক্ষা পেতে পালং শাকের ভূমিকা অপরিসীম।
- পালং শাকের দশটির বেশি ফ্লাভোনয়েট যা শরীরের ভয়ংকর সব রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। এই উপাদান গুলো দেহে ফ্রিরেডিক্যালকে নিরপেক্ষ করে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
আমরা এখানে অল্প কিছু পালং শাকের উপকারিতা আলোচনা করেছি। এছাড়াও আরো অনেক পালং শাকের উপকারিতা রয়েছে। তাই সুষম খাদ্য হিসেবে আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পালং শাক হতে পারে একটি আদর্শ খাবার।
পালং শাকের অপকারিতা
আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য পালং শাকের উপকারিতা অনেক। তবে অতিরিক্ত পালং শাক খাওয়া কারো কারো স্বাস্থ্যের জন্য বিপদজনক হতে পারে। নিজে পালং শাকের অপকারিতা গুলো বর্ণনা করা হলো-
১) পালং শাকের প্রচুর পরিমাণে অক্সালেট থাকে। ১০০ গ্রাম পালং শাকের অক্সালেটের পরিমাণ 970 মিলিগ্রাম। যার কারনে পালং শাক অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে কিডনিতে পাথর তৈরি হতে পারে। প্রস্তাবের অপশনেট এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে এই পাথরগুলো তৈরি হয়।
কিডনিতে ক্যালসিয়াম অক্সালেট নামক পাথর পাওয়া যায়। তবে রান্না করা পালং শাক বা ফুটন্ত পালংশাকে অক্সালেটের ঘনত্ব কিছুটা কমতে পারে। এছাড়া পাথর প্রতিরোধ করার জন্য এই শাকের সাথে ক্যালসিয়াম ভিত্তিক খাবার যেমন দই অথবা পনির মিশ্রিত করে খাওয়া যেতে পারে।
২) পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে যা রক্ত পাতলা করে ওষুধের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। বিভিন্ন ধরনের স্ট্রোক প্রতিরোধে রক্ত পাতলাকারি ওষুধ দেওয়া হয়। তাই এমন রোগীদের পালং শাক খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো। ৪৪৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন কে থাকে আধা কাপ রান্না করা পালং শাকে এবং এক কাপ কাঁচা পালং শাকে থাকে ১৪৫ মিলিগ্রাম পুষ্টি।
তাপ পুষ্টির শোষণ বাড়াই তাই রান্না করা পালং শাকের ভিটামিন কে এর পরিমাণ বেশি থাকে। কিন্তু পালং শাকে থাকা ভিটামিন কে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ভিটামিন কে আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারী। তবে অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নাই।
৩) পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অক্সালেট। এই অক্সালেট একটি অ্যান্টিনিউট্রিয়েনট। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার শরীরের খনিজ শোষণকে বাধা দেয়। আর পালং শাকের অক্সালেট আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের মতো খনিজ পদার্থকে শোষণ করতে বাধা দেয়।
ধারণা করা হয় যে পালং শাক থাইরয়েডের সমস্যা বাড়াতে পারে। পালং শাকে থাকা গাইড্রোজেন নামক কিছু যৌগ এই ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে বলে মনে করা হয়। তবে এ ধরনের গবেষণা সঠিক বলে এখনো প্রমাণিত হয়নি। তবে যাদের থাইরয়েডের সমস্যা রয়েছে তারা পালং শাক খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৪) পালং শাকের যে পিউরিন নামক রাসায়নিক যৌগ রয়েছে তা গাউটে প্রভাব ফেলে বলে মনে করা হয়। পালং শাক দিয়ে গেটে বাত বাড়ায় এ বিষয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন। তবে যাদের গাউটের সমস্যা রয়েছে তারা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পালং শাক খান।
কিছু গবেষণায় দেখা যায় যে, অতিরিক্ত পরিমাণে পালং শাক খাওয়ার ফলে রক্তচাপ এবং রক্তের শর্করার মাত্রা খুব কমে যেতে পারে। তাই যারা উচ্চ রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ খাচ্ছেন তাদের জন্য পালং শাক খাওয়া থেকে বিরতি থাকাই ভালো।
৫) পালং শাক একেবারে বা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খুব বেশি পরিমাণে খেলে আমাদের শরীরে বিষাক্ত প্রভাব করতে পারে।
৬) অতিরিক্ত পরিমাণে পালং শাক খেলে পেটের সমস্যা বিশেষ করে গ্যাস, পেট ফোলা ভাব ইত্যাদি হতে পারে।
পালং শাকের জুসের উপকারিতা
পালং শাকের রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, আয়রন, মিনারেলস, প্রোটিন। এসব পুষ্টিগণ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, শরীরের হাট মজবুত করে, ত্বক এবং চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
সাধারণত আমরা পালং শাক সিদ্ধ করে, সালাত বা তরকারি হিসেবে রান্না করে খেয়ে অভ্যস্ত। কিন্তু কখনো পালং শাকের জুস খেয়েছেন কি? জানেন কি পালং শাকের জুসের উপকারিতা সম্পর্কে? আসুন জেনে আসি পালং শাকের জুসের উপকারিতা এবং কিভাবে পালং শাকের জুস তৈরি করবেন সে সম্পর্কে-
প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে পালং শাকের জুসের মধ্যে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যৌবন ধরে রাখার পক্ষে সহায়ক হিসেবে কাজ করে এই পালং শাক। নিয়মিত প্রতিদিন সকালে পালং শাকের জুস খেলে কমে যাবে শরীরের বাড়তি মেদ। ১০ থেকে ১৫ কেজি ওজন কমানো সম্ভব এক মাসের মধ্যে নিয়মিত এই পালং শাকের জুস খেয়ে।
এছাড়াও ডায়াবেটিস এবং হাঁপানি রোগীদের জন্য এই পালং শাকের জুস খুব কার্যকরী। তাই বলা যেতে পারে, আমাদের শরীরের জন্য পালং শাকের জুসের উপকারিতা অনেক। অনেকেই মনে করেন পালং শাকের জুস বানানো খুব ঝামেলার কাজ। কিন্তু সঠিক নিয়ম এবং পদ্ধতি জানা থাকলে খুব সহজে আপনি বানাতে পারেন পালং শাকের জুস।
পালং শাকের জুস বানানোর জন্য প্রথমে একটি মিক্সার ব্লেন্ডার মেশিনের মধ্যে নেই কিছু পালং শাক, কয়েক টুকরা আদা এবং পানি। এগুলোকে একত্রে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এই পুরো জিনিসটা মিক্স হয়ে জুস এর মত হয়ে গেলে একটি গ্লাসে ঢেলে নিতে হবে। এরপর এর মধ্যে লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে হবে। প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে পালং শাকের জুস খেলে শরীরের বাড়তি মেদ কমে যায়।
গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা
পালং শাক খুব স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর একটি খাবার। গর্ভাবস্থায় পালং শাকের উপকারিতা সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হলো-
- পালং শাকে যে ফলিক এসিড হয়েছে তার গর্ভবতী মহিলার গর্ভপাত রোধ করতে সাহায্য করে। এটি ভ্রূণের মেরুদন্ড এবং জ্ঞানী ও বিকাশে সাহায্য করে। পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকায় এটি লাল রক্ত কণিকা তৈরি করতে সাহায্য করে যা গর্ভাবস্থায় রক্তস্বল্পতার ঝুঁকি কমাতে অবদান রাখে।
- গর্ভাবস্থায় পালং শাকের বিদ্যমান ভিটামিন ই ফ্রি রেডিক্যাল ক্ষরণের বিরুদ্ধে লড়াই করে দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে এবং দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা ভারসাম্য করতে সাহায্য করে। সর্বোত্তম ভিটামিন ই পাওয়ার জন্য গর্ভাবস্থায় সিদ্ধ করা পালং শাক খেতে পারেন।
- গর্ভাবস্থায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে গর্ভে থাকা ছোট্ট শিশুটির জন্য অতিরিক্ত সুরক্ষার প্রয়োজন। পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়ার মাধ্যমে আপনি সর্দি কাশিসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাইকে বিদায় জানাতে পারেন এবং পালং শাক হজমে সাহায্য করে।
- এগুলো ছাড়াও গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়ার আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে। তবে গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পরিমাণ পালং শাক খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। গর্ভবতী মহিলার যদি কিডনিতে পাথর থাকে তাহলে তাকে সীমিত পরিমাণে পালং শাক খেতে হবে।
লেখক এর মন্তব্য
পালং শাক আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় খুবই উপযোগী এবং সুপরিচিত একটি সবজি। সবুজ রঙের এই পাতা বিশিষ্ট সবজিটিতে রয়েছে অসাধারণ পুষ্টিগুণ।আমাদের শরীরের জন্য পালং শাকের উপকারিতা অনেক।তবে এর কিছু অপকারিতা রয়েছে যা খুবই সামান্য, বিশেষ করে নির্দিষ্ট শারীরিক সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের জন্য। তবে আমাদের সবার জন্যই পরিমিত পরিমাণে পালং শাক খাওয়া উচিত।
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ ধরে আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময় দিয়ে আমাদের পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে জানাই অনেক ধন্যবাদ। এরকম তথ্যবহুল এবং আপনার পছন্দের আরো অনেক পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েব সাইটটি বেশি বেশি ভিজিট করুন, কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন এবং শেয়ারের মাধ্যমে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url