নারীদের উপর পর্দা করা ফরজ

পবিত্র কুরআন মাজীদের পর্দাকে মহিলাদের নিরাপত্তার অংশ হিসাবে বলা হয়েছে। মুসলিম নারীদের উপর পর্দা করা ফরজ। পর্দা করার মাধ্যমে নারী তার রূপ লাবণ্যকে আবৃত রাখতে পারে। আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমরা নারীদের উপর পর্দা করা ফরজ এবং পুরুষের পর্দা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো ইনশাল্লাহ।
নারীদের উপর পর্দা করা ফরজ

ইসলাম মুসলিম নারীদের জন্য যে পর্দার বিধান দিয়েছে তা শুধুমাত্র অশ্লীলতা ও ব্যভিচারিতা দূর করার জন্য এবং সমাজে অনিষ্ঠতা এবং ফিতনা-ফাসাদ থেকে রক্ষা করার জন্য। নারীদের প্রতি কোন রকম অবিচার এবং নারীদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি করার জন্য নয়। পর্দা একজন নারীকে সমাজের সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

ভূমিকা

মহান আল্লাহ তা'আলা নারীদের উপর পর্দা করা ফরজ করে দিয়েছেন। পর্দা করা নারীদের জন্য একটি ইবাদত ও বটে। আমাদের সমাজে অনেক মানুষ আছে যারা পর্দা সম্পর্কে বিভিন্ন ভিন্নমত পোষণ করে থাকেন। এসব লোক মনে করেন পর্দা নারীকে সমাজের অনেক কাজে পিছিয়ে রাখছে। কিন্তু ইসলামে নারী এবং পুরুষ উভয়ের জন্য পর্দা করার নির্দেশ রয়েছে।

নারীদের উপর পর্দা করা ফরজ

মহান আল্লাহতালা পবিত্র কুরআনে নারী এবং পুরুষ উভয়কে তাদের দৃষ্টি নত রাখার কথা এবং লজ্জাস্থানের হেফাজতের কথা উল্লেখ করেছেন। ইসলাম নারীদের উপর পর্দা করা ফরজ করার মাধ্যমে সমাজে নারীদের সম্মানের উচ্চ মর্যাদা দান করেছে।
আরো পড়ুনঃযাকাত দানের ফজিলত
কিন্তু বর্তমানে পশ্চিমা বিশ্বের অনেক কালচার মানুষের মধ্যে ঢুকে পড়েছে যার কারণে মানুষ পর্দার আসল মর্যাদা বুঝতে পারে না। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা নূর এর ৩০-৩১ নং আয়াতে বলেছেন," মুমিনদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে।
নিশ্চয়ই তারা যা করেন সে সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা অবগত আছেন। এবং ঈমানদার নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশ সমান তা ছাড়া যাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের ওড়না বক্ষদেশে দিয়ে রাখে।
পর্দার বিধান সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে আরও বলেন, "হে নবী, আপনি আপনার স্ত্রী, কন্যা এবং মমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের একাংশ নিজেদের ওপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে এবং তাদেরকে উত্তপ্ত করা হবে না"।
আব্দুল্লাহ(রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নারী ঢেকে রাখার বস্তু। যখন সে পর্দাহীন ভাবে বের হয় তখন শয়তান তার দিকে তাকায়'। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, 'তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট তারাই, যারা পর্দাহীনভাবে চলাফেরা করে'।
পর্দা তিনটি পর্যায়ে পালন করা যায়। যথা-
  • বাড়িতে অবস্থানকালে পর্দা
  •  বাইরে বের হতে পর্দা
  • বৃদ্ধা অবস্থায় পর্দা
    নারীদের উপর পর্দা করা ফরজ

বাড়িতে অবস্থান কালে পর্দাঃ নারীর আশ্রয়স্থল এবং আবাসস্থল হলো বাড়ি। নিজ গৃহে নারীদের পর্দা রক্ষা করার ব্যাপারে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, " যখন তোমরা নবী পত্নীদের কাছে কিছু চাইবে তা পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এই বিধান তোমাদের এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ হবে"।
উক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা নবী পত্নীদের কথা উল্লেখ করলেও তা সমগ্র মুমিন নারীদের জন্য প্রযোজ্য। মহান আল্লাহ তায়ালার দেওয়া এই বিধানের সারমর্ম হল- যেসব পুরুষকে মহান আল্লাহ তায়ালা নারীদের মাহরাম করেছেন তারা ব্যতীত অন্য পর পুরুষ তাদের প্রয়োজনীয় কোন বস্তু নারীদের কাছ থেকে চাইলে তা পর্দার আড়াল থেকে চেয়ে নেবে।
বাইরে বের হতে পর্দাঃ নারীদের বিভিন্ন প্রয়োজনে বাইরে যাওয়া লাগতে পারে। আর ইসলাম প্রয়োজনে নারীদের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। বাইরে যাওয়ার সময় নারীরা কিভাবে পর্দা করবে সে বিষয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
ইমাম কুরতুবী(রহঃ) বলেন, নারীর এমন একটা পোশাকের নাম জিলবাব যা যা দিয়ে তারা পুরো শরীর ঢেকে রাখে। অর্থাৎ বাইরে বের হওয়ার সময় নারীরা তাদের ব্যবহৃত জামা, ওড়না এবং পাজামার ওপর যে আলাদা ঢিলে ঢালা পোশাক পরিধান করে থাকে যা তাদের পা থেকে মাথা পর্যন্ত আবৃত করে রাখে এমন পোশাকেই জিলবাব বলে।
আমাদের দেশে এরকম পোশাককে বোরখা বলা হয়ে থাকে। নারীরা বাইরে বের হওয়ার সময় এরকম ঢিলেঢালা পোশাক পরে বের হবে যাতে তাদের প্রতি পরপুরুষ আকৃষ্ট না হয়।
বৃদ্ধা অবস্থায় পর্দাঃ মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, "অতিশয় বৃদ্ধা নারী, যারা বিবাহের আশা রাখে না, তাদের জন্য কোন অপরাধ নেই, যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তাদের অতিরিক্ত বস্ত্র খুলে রাখে। তবে এর থেকে বিরত থাকায় তাদের জন্য উত্তম। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ"।
এই আয়াতের সারমর্ম হল, যে বৃদ্ধা নারীর প্রতি কেউ আকর্ষিত হয় না এবং যে নারী বিবাহের যোগ্য নয় তার জন্য পর্দার বিধান শিথিল করা হয়েছে।

পুরুষের পর্দা

যেমন নারীদের উপর পর্দা করা ফরজ তেমনি পুরুষদের জন্য পর্দা ফরজ করা হয়েছে। আমাদের সমাজে ছাত্র নারীদের উপর পর্দা করা ফরজ বলে মনে করা হয়। কিন্তু নারীদের পাশাপাশি পুরুষের পর্দার যে বিধান রয়েছে সে সম্পর্কে আমরা ভুলে যাই। অনেকেই বলেন, নারীদের উপর পর্দা করা ফরজ কিন্তু পুরুষের আবার পর্দা কিসের?
মহান আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে মহিলা এবং পুরুষ উভয়ের জন্য পর্দার বিধান দিয়েছেন। তবে নারী ও পুরুষের পর্দার ব্যবহারিক কিছু পার্থক্য রয়েছে। নারী বাইরে গেলে তাদের বোরখা বা চাদর দিয়ে তাদের সমস্ত শরীর ঢেকে রাখার মাধ্যমে পর্দা করবে আর পুরুষ নিজেকে সংযত রাখা ও চোখের হেফাজতের মাধ্যমে পর্দা করবে।
মহান আল্লাহ বলেন, " হে নবী, , আপনি ঈমানদার পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য উত্তম পবিত্রতা রয়েছে"। ইচ্ছাকৃত দৃষ্টিপাত আর টাকা নয় হচ্ছে যৌন প্রভৃতির সূচনা এবং যার শেষ পরিণতি হতে পারে জেনা ব্যভিচার, পাপ ও ফিতনা যার পরিণতি ইহকাল এবং পরকালে খুবই ভয়ঙ্কর।

পর্দা নিয়ে বিতর্ক কেন

ইসলামে মুসলিম নারীদের উপর পর্দা করা ফরজ করা হয়েছে। নারীদের এই পর্দা করা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। এখন প্রশ্ন হলো পর্দা নিয়ে বিতর্ক কেন? এমন প্রশ্নের উত্তর হিসেবে আমরা বলতে পারি, লিঙ্গ সমতার মৌলিক নীতির উপর ভিত্তি করে এটি একটি প্রতিকি বৈষম্যকে প্রতিফলন করে।
বোরখা পরা বা পর্দা করা শুধুমাত্র যে ইসলামের রয়েছে এবং এর জন্য যে এদেরকে এক ঘরে করে দিতে হবে এরকম বিবেচনা করা উচিত নয়। যে বোরখা পড়েছে সে ভিন্ন কোন জগতের প্রাণী নয়। বোরকা পড়া বা পর্দা প্রথা একেক দেশে একেক অঞ্চলে একেক রকম হয়ে থাকে।
ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ "তাওরাত" এ এমন কিছু আয়াত রয়েছে যেখানে সরাসরি পর্দার কথা বলা হয়নি কিন্তু ইহুদি পন্ডিতদের মতে কিছু আয়াত এ নির্দিষ্ট অবস্থায় প্রেক্ষিতে পর্দার কথা বলা হয়েছে বলে বিবেচনা করা হয়।
ভাটিকান সিটির খ্রিস্টানদের চার্চে যারা নান হিসেবে যুক্ত আছেন তারা বোরখার মতো এক ধরনের পোশাক পরে যা তাদের পুরো শরীরকে আবৃত করে রাখে এবং তাদের মাথায় সাদা রঙের হিজাব দেখতে পাওয়া যায়।

পর্দার গুরুত্ব

ইসলামে পর্দার গুরুত্ব অনেক। নারী এবং পুরুষ উভয়ের জন্য পর্দা করা ফরজ। পর্দা করার মাধ্যমে ইহকালে যেমন হেফাজত ও নিরাপত্তা এবং সামাজিক শান্তি এবং স্থিতিশীলতা লাভ করা যায় তেমনি পরকালের এর প্রতিদান হিসেবে মহান আল্লাহ তাআলার নিয়ামত ও জান্নাত পাওয়া যায়।
পক্ষান্তরে যারা বেপর্দা ভাবে চলাফেরা করে তাদের জন্য দুনিয়াতে যেমন লাঞ্ছনা রয়েছে তেমনি পরকালে রয়েছে জাহান্নাম। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহিলারা যেন তাদের পাজামা পায়ের গোছা হবে এক বিঘত পরিমাণ নামিয়ে দেয়।
তখন উম্মে সালমা (রাঃ) বলেন, এ অবস্থায় তো তাদের পায়ের টাকনো হতে নিচের অংশ খোলা থাকবে।তখন হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেন, তাহলে এক হাত পরিমাণ নিচে নামিয়ে পড়বে। সমাজের অনেকেই বলে থাকেন মনের পর্দা হল বড় পর্দা, বাইরে পর্দা করার দরকার নেই। এরকম কথা কোরআন ও হাদিস বিরোধী এবং কুফুরি মূলক কথা।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন, "তোমরা গৃহের ভেতরে অবস্থান করো, জাহেলী যুগের নারীদের মতো নিজেদের প্রদর্শন করবে না"। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, সাবধান, কোন পর পুরুষ যেন অপর কোন নারীর সাথে নির্জনে একত্রে অবস্থান না করে।
নারীদের উপর পর্দা করা ফরজ

কেননা যখনই তারা একত্রিত হয় তখন শয়তান তাদের তৃতীয় জন হয় এবং তাদেরকে কুকর্মে লিপ্ত করানোর চেষ্টায় তাদের পেছনে লেগে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় মেয়েরা বিবাহের আগে পর্দা করে চলে কিন্তু বিবাহ হয়ে গেলে তারা পর্দার ব্যাপারে আর তেমন সতর্ক থাকে না। সন্তান হলে তো আর কথাই নেই।
পরিবারের অন্য সদস্যদের সামনে বা অন্যান্য নারীদের সামনে তাদের স্তন উন্মুক্ত করে বাচ্চাদের দুধ খাওয়ায়। কিন্তু বিবাহের পূর্বে বা পড়ে নারীদের জন্য পর্দার হুকুম একই। তাই সকলের উচিত অন্যান্য এবাদতের মত পর্দার ব্যাপারেও সকল মুমিন নারী পুরুষকে সতর্কতা অবলম্বন করা।

ইসলামের পর্দার গুরুত্ব

ইসলামে পর্দার গুরুত্ব রয়েছে। ইসলামে পর্দার প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল নারী ও পুরুষের মধ্যে শালীনতাকে অনুপ্রাণিত করা। পবিত্র কুরআনে নারীদের মাথা ঢেকে রাখার আদেশ দেওয়া হয়েছে এবং তাদের বক্ষের ওপর আবরণ টেনে নেওয়ার উপদেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও পুরুষদের জন্য পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে।
কিছু পন্ডিত যুক্তি দেন যে পর্দা মহিলাদের হয়রানি থেকে রক্ষা করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে অনেক নারী-পুরুষ একত্রে প্রকাশ্যে চলাফেরা করে এবং এ অবস্থায় মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য পর্দার কোন বিকল্প নেই।

লেখকের মন্তব্য

ইসলামে অন্যান্য ইবাদতের মত পুরুষ এবং নারী উভয়ের জন্য পর্দা করা ফরজ। পর্দা করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং ইহকালীন পরকালীন কল্যাণ লাভ করা যায়। সকল মুমিন পুরুষ নারীদের উচিত আল্লাহ তায়ালার আদেশ-নিষেধ মেনে শরীয়ত সম্মতভাবে জীবন যাপন করা। এতে রয়েছে প্রকৃত কল্যাণ।
আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের আর্টিকেলের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে জানাই ধন্যবাদ। এরকম তথ্যপূর্ণ এবং আপনার কাছে ভালোলাগা আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েব সাইটটি বেশি বেশি ভিজিট করুন এবং শেয়ার এর মাধ্যমে আপনার পরিচিতদের পড়ার সুযোগ করে দিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url