গরমে কলা খাওয়ার উপকারিতা কাঁচা কলার অপকারিতা
কলা আমাদের দেশে সারা বছরই পাওয়া যায়। কলা অনেক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল। গরমে কলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। শুধু গরমকাল নয় শীতকালেও অনেকেই কলা খেয়ে থাকে। আজকের আর্টিকেলটিতে আমরা গরমে কলা খাওয়ার উপকারিতা, কাঁচা কলার অপকারিতা এবং কলার পুষ্টিগণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো ইনশাআল্লাহ।
কলা ছোট বড় সবারই অনেক প্রিয় একটা ফল। কলা কে চিনেনা এমন লোক খুঁজে পাওয়া বিরল। পাকা কলা আমাদের শরীরের জন্য যেমন উপকারী তেমনি কাঁচা কলার উপকারিতা ও রয়েছে। কলাতে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে।
ভূমিকা
বিশ্বের সব মানুষেরই প্রিয় ফল হিসেবে পরিচিত কলা। কলা পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কলা খুবই উপকারী। কলাতে অনেক বেশি ক্যালোরি থাকে, তাই অনেকের মনে করেন এটি ডায়েটের জন্য ভালো নয়। কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণরূপে ভুল। তবে কাঁচা থেকে কলা যখন পেকে যায় তখন তার গুণাগুণ বদলে যায়।
গরমে কলা খাওয়ার উপকারিতা
দামে কম এবং গুণে ভরপুর কলা প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। ফলের রাজা আম হলেও কলার পুষ্টিগুণ এবং সহজলভ্যতার কারণে কলা মানুষের খুব প্রিয় হয়ে উঠেছে। গরমে কলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। আসুন জেনে আসি গরমে কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কেঃ
আরো পড়ুনঃআম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- কলায় অন্যান্য ফলের তুলনায় এসিডের পরিমাণ খুব কম থাকে। তাই গরমে যারা এসিটিটি, মাইগ্রেন এবং পায়ের পেশি টানের বিভিন্ন সমস্যায় ভোগেন, তারা নিয়মিত সকালে নাস্তার সাথে কলা খেলে উপকার পাবেন।
- তীব্র গরমে দুপুরের আগে নাস্তা হিসেবে কলা খেলে মন প্রফুল্ল এবং সতেজ থাকে।
- কলা আমাদের শরীরে দ্রুত শক্তি যোগায়। গরমে যারা খুব তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে পড়েন তাদের জন্য কলা একটি আদর্শ খাবার।
- কলাতে রয়েছে পটাশিয়াম যা আমাদের পেশিকে স্বস্তিতে রাখে। সারাদিনের কাজের পর ক্লান্ত শরীরের বিকেলের নাস্তায় বা রাতে কলা খেলে রাতের ঘুম ভালো হয়।
- অতিরিক্ত গরমে শরীরে ঘামের ফলে শরীর থেকে দ্রুত পানি বের হয়ে যায়। যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। কলাতে রয়েছে ফাইবার এবং ফ্রকটোজ যা এসব সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে।
- গরমে যারা শরীর চর্চা করে থাকেন তাদের শরীরের ক্যালরির ঘাটতি পূরণ করতে কলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- কলা শরীরের থাইরয়েড হরমোন তৈরি করে হাইপোথাইরয়েডিজম সমস্যা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
- দুধ, চিনি এবং রুটি একত্রে মিশিয়ে তৈরি করা খাবার খুবই পুষ্টিকর এবং দ্রুত হজম হয়। তাই বাচ্চাদের জন্য এই খাবারটি খুবই ভালো
- বাচ্চাদের খাবারের অরুচি হলে শরীরে প্রয়োজনীয় ক্যালোরির ঘাটতি পূরণ করতে কলা দিয়ে তৈরি মিল্ক শেক খাওয়ানো যেতে পারে।
কাঁচা কলার অপকারিতা
কলা অনেক উপকারী এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি ফল। কাঁচা কলার উপকারিতা যেমন রয়েছে তেমনি কাঁচা কলার কিছু অপকারিতা ও রয়েছে। কাঁচা কলার অপকারিতা সম্পর্কে নিচে দেওয়া হলঃ
হজমের সমস্যা- যদিও কাঁচা কলা বদহজমের জন্য খুবই উপকারী, তবুও যাদের আগে থেকে হজমের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য কাঁচা কলা এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের কাঁচা কলা খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো। কেননা এতে তাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে।
ওজন বৃদ্ধিতে- সাধারণত কাঁচা কলা তেমন মিষ্টি হয় না। তবুও কিছু কিছু কলা মিষ্টি হতে পারে। আর এ মিষ্টি জাতীয় কলাতে ক্যালরি এবং চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। তাই যারা ওজন কমাতে চাচ্ছেন তারা কাঁচাকলা খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। গর্ব অবস্থায় এমনিতে ওজন বাড়তে থাকে তাই গর্ব অবস্থায় কাঁচা কলা না খাওয়াই ভালো।
এলার্জির সমস্যা- যাদের অ্যালার্জি রয়েছে তারা কাঁচা কলা খাবেন না। কেননা অতিরিক্ত পরিমাণে কাঁচা কলা খাওয়ার ফলে মারাত্মক এলার্জির সমস্যা হতে পারে।
ঘুম বেড়ে যাবে- কলাতে রয়েছে ভিটামিন বি ৬। ফলে অতিরিক্ত কাঁচা কলা খাওয়ার কারণে ঘুম বেড়ে যেতে পারে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি বয়ে নিয়ে আসতে পারে। তাই সতর্কতার সাথে এই খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো।
কলা খাওয়ার উপকারিতা
মানুষের জনপ্রিয় ফল গুলোর মধ্যে কলা অন্যতম। কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান। কলা আমাদের শরীরের পুষ্টি এবং ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে। গরমে কলা খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে। এছাড়াও কলা খাওয়ার আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে। নিচে কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বর্ণনা করা হলোঃ
হৃদ রোগের ঝুঁকি কমাতেঃ কলায় রয়েছে উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম। আর এই পটাশিয়াম শরীরের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপ হৃদ রোগের প্রধান কারণ। তাই নিয়মিত কলা খাওয়ার ফলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
হজম শক্তি বৃদ্ধিতেঃ কলাতে রয়েছে ফাইবার যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এছাড়া কলা পরিপাকতন্ত্রকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শক্তি বৃদ্ধিতেঃ কলাতে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি এবং কার্বোহাইড্রেট, যা আমাদের শরীরকে তাৎক্ষণিক শক্তি প্রদান করতে সাহায্য করে। তাই শরীরচর্চা করার আগে এবং পরে কলা খেলে তাৎক্ষণিক এনার্জি পাওয়া যায়।
মেজাজ ভালো রাখতেঃ কলাতে রয়েছে টিপটো ফ্যান নামক একটি উপাদান যা মস্তিষ্কে সেরোটনিন হরমোন উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। আর এই হরমোন মেজাজ ভালো রাখতে এবং বিষন্নতা দূর করতে সাহায্য করে।
ওজন কমাতেঃ কলাতে ক্যালরি কম থাকলেও ফাইবার বেশি থাকে। আর তাই এটি খেলে খোদা কম লাগে এবং পেট ভরে যায়। যারা ওজন কমাতে চান তাদের খাদ্য তালিকায় কলা রাখতে পারেন।
ত্বকের যত্নেঃ কলাতে রয়েছে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং কলার মাখন ত্বকে লাগালে ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল হয়।
কিডনি সুস্থ রাখতেঃ কলাতে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি থাকায় তা কিডনির কার্যকারিতা বাড়ায় এবং কিডনির বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
রক্তস্বল্পতা দূর করেঃ কলাতে রয়েছে আয়রন যা রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। আইরন রাতে হিমোগ্লোবিনের সংখ্যা বাড়ায় এবং রক্তস্বল্পতা দূর করে।
স্মরণশক্তি বাড়াতেঃ কলায় রয়েছে ভিটামিন সি এবং ম্যাগনেসিয়াম যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ কলায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন শরীরের ফ্রি রেডিক্যাল দূর করতে সাহায্য করে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
হাড়ের শক্তি বাড়াতেঃ কলাতে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে যা হারের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করতেঃ আমাদের শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করতে কলার ভূমিকা অপরিসীম। আমাদের দৈনন্দিন ভিটামিন b6 এর চাহিদার প্রায় পাঁচ শতাংশ পূরণ করে কলা। এছাড়া শরীরের সুস্থ কোষ তৈরি করতে প্রয়োজনীয় ইনসুলিন, হিমোগ্লোবিন এবং অ্যামাইনো এসিড গঠন করতে কলা সাহায্য করে।
ডায়রিয়া প্রতিরোধেঃ কলা পরিপাকের প্রক্রিয়াটিকে সচল করে এবং বৃহদন্ত্রে গিয়ে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া খাদ্যে পরিণত হতে পারে। এছাড়া ডায়রিয়ার ফলে শরীরের অবক্ষয়িত খনিজ পদার্থ পূরণ করতে কলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রতিদিন দুটি করে কলা খেলে কি হয়
গরমে কলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। এখন প্রশ্ন হল প্রতিদিন দুটি করে কলা খেলে কি হয়? কলা তো আমরা অনেকগুলো খেতে পারি। কিন্তু নিয়ম করে প্রতিদিন করে কলা খেলে যে উপকার সাধিত হয় তা নিচে দেওয়া হল-
যেকোনো খাবার নিয়ম করে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে দুটি করে কলা খেলে আমাদের শরীরে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। কলাতে রয়েছে যা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
রক্তে রোহিত রক্তকণিকার পরিমাণ বা হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গিয়ে রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। আর এই রক্তস্বল্পতার ঝুঁকি কমাতে প্রতিদিন নিয়ম করে দুটি করে কলা খাওয়া উচিত।
মানুষ অনেক সময় মানসিক চাপে বা বিষণ্ণতায় ভোগে। কলাতে রয়েছে ট্রিপ টোফেন যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং শরীরকে সতেজ রাখে।
কলা খাওয়ার সঠিক সময় কোনটি
কলা খাওয়ার সঠিক সময় কোনটি এ সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণা নেই। আমরা যেকোনো সময়ে কলা খেয়ে থাকি। আসুন জেনে আসি কলা খাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে-
বিশেষজ্ঞদের মতে, কলা খাওয়ার সঠিক সময় হল সকাল বেলা। কলাম মূলত সকাল বেলা খাওয়াই উচিত। কেননা সকালে কলা খেলে এর উপকারিতা আমরা সারাদিন পেয়ে থাকি। কিন্তু সকালে কলা খাওয়ার ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে যে, যেন খালি পেটে কলা খাওয়া না হয়। খালি পেটে কলা খাওয়া কখনোই উচিত নয়।
তাই সতর্কতার সাথে আমাদের সকালে কলা খাওয়া উচিত।
লেখকের মন্তব্য
কলা আমাদের শরীরের জন্য খুবই পুষ্টিকর একটি ফল। আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমরা গরমে কলা খাওয়ার উপকারিতা, কলা খাওয়ার সঠিক সময়, কাঁচা কলার অপকারিতা এবং কলার আরো অন্যান্য অপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি। আমাদের সকলের উচিত জেনে বুঝে নিয়ম মেনে খাবার খেয়ে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখা।
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ ধরে আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। এরকম তথ্যপূর্ণ এবং আপনার কাছে ভালো লাগা আরও পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েব সাইটটি বেশি বেশি ভিজিট করুন এবং শেয়ারের মাধ্যমে আপনার পরিচিতদের পড়ার সুযোগ করে দিন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url