পুই শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো যেনে নিই
আমাদের বাড়ির আনাচে-কানাচে পুই শাকের গাছ দেখা যায়। পুঁই শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। পুই শাক লতা জাতীয় উদ্ভিদ। পুইশাকের পাতা, ডাটা এবং পুঁইশাকের বিচি সবই খাওয়া হয়। আজকে আমরা পুঁই শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং পুইশাকের বিচির উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো ইনশাআল্লাহ।
পুঁইশাক নরম এবং বহু শাখা যুক্ত উদ্ভিদ। পুঁইশাক অনেক পুষ্টিকর একটি খাবার এবং খেতেও খুবই সুস্বাদু। পুইশাকের পাতা সহ সমস্ত গাছ ভেষজ গুণাবলীতে পরিপূর্ণ। পুইশাকের পাতা ১০ মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। এছাড়াও পুঁইশাক দ্রুত বর্ধনশীল গাছ। আমাদের দেশে সারা বছরই পুই শাক পাওয়া যায়।
ভূমিকা
আমাদের দেশে জনপ্রিয় ও সুস্বাদু শাকের মধ্যে অন্যতম এবং সহজলভ্য শাক হচ্ছে পুঁইশাক। 'মাছের মধ্যে রুই আর শাকের মধ্যে পুঁই' এরকম একটা প্রবাদ আমাদের বাঙ্গালীদের মধ্যে রয়েছে। ইলিশ মাছ ও পুঁইশাক এবং চিংড়ি মাছের সাথে পুঁইশাক বাঙ্গালীদের একটি জনপ্রিয় খাবার। পুঁইশাক অনেক পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার।
পুঁই শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা
পুই শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে। অন্যান্য শাকের মতো পুঁইশাকেও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, লোহা এবং ক্যালসিয়াম রয়েছে। নিচে পুঁই শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে দেওয়া হলঃ
আরো পড়ুনঃপালং শাকের উপকারিতা এবং অপকারিতা বিস্তারিত জানুন
উপকারিতা
ওজন কমাতেঃ পুইশাকে ভিটামিন সি এবং আয়রন সমৃদ্ধ মেটাবলিজম রয়েছে যা বিপাক ক্রিয়া সহজ করে ক্যালরি ক্ষয় করতে সাহায্য করে। তাই যারা অতিরিক্ত মোটা তাদের জন্য পুঁইশাক খাওয়া বেশ উপকারী কেননা পুইশাকে ওজন কমানোর উপাদান রয়েছে।
এনার্জি বাড়াতেঃ পুইশাকে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম যা শরীরে এনার্জি বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও পুইশাকে রয়েছে ফোলেট যা খাবারকে এনার্জিতে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে। তাছাড়া পুঁইশাক হল ন্যাচারাল এলকাইন যা আমাদের এনার্জেটিক ধরে রাখতে সাহায্য করে।
হজমের ক্ষমতা বাড়াতেঃ পুঁইশাক কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। পুইশাকে রয়েছে ফাইবার যা কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে। এছাড়া আমাদের গ্যাসের সমস্যা দূর করতে বেশ কার্যকরী এই পুঁইশাক। এটি হজম ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীর থেকে বজ্র পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিকস কমাতেঃ পুইশাকের রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি আর অটোনমিক নিউরোপ্যাথি কমাতে পুঁইশাক সাহায্য করে। তাই বলা যেতে পারে ডায়াবেটিস কমাতে পুঁইশাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ পুইশাকের রয়েছে ক্লোরোফিল যা কারসিনোজেনিক প্রভাব আটকাতে সাহায্য করে। আর এই কারসিনোজেনিক এর প্রভাবে ক্যান্সার হয়ে থাকে। এছাড়াও পুইশাকে রয়েছে ফাইবার যা পাকস্থলী আর কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
শিশুদের বৃদ্ধি বাড়াতেঃ শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল এবং প্রোটিন পুই শাকের রয়েছে। তাই শিশুদের বাড়ন্ত বয়সে নিয়মিত পুঁইশাক খাওয়ানো হলে শিশুদের বৃদ্ধি আরো ভালো হয়।
চোখ ভালো রাখতেঃ পুই শাকে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন, লুটেইন যা আমাদের চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ব্লাড প্রেসার কমাতেঃ পুইশাকে রয়েছে পটাশিয়াম যার শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। তাই পুঁইশাক কম খাওয়ার ফলে শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা কমে যায়। যার ফলে শরীরে ব্লাড প্রেসার বেড়ে যায়। তাই ব্লাড প্রেসার কমাতে অবশ্যই নিয়মিত আমাদের পুঁইশাক খাওয়া উচিত।
হাড় শক্ত করতেঃ পুই শাকে রয়েছে ভিটামিন কে যা আমাদের হার শক্ত এবং মজবুত করতে সাহায্য করে। তাই তাই পুঁইশাক কম খাওয়া মানে ভিটামিন কে শরীরের কম প্রবেশ করা। আর ভিটামিন কে শরীরে কম প্রবেশ করলে হার মজবুত হওয়া কমে যায়।
চুল এবং ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতেঃ আমাদের চুল এবং ত্বকের জন্য পুঁইশাক খুবই উপকারী। পুঁইশাকে রয়েছে ভিটামিন এ যা আমাদের ত্বকের তেল নিঃসরণ কে নিয়ন্ত্রণ করে। যার ফলে আমাদের ত্বকে ব্রণ হয় না। এছাড়াও পুঁইশাক আমাদের ত্বকের মশ্চারাইজার ধরে রাখতে সাহায্য করে।
শুক্রাণুর সক্রিয়তা বৃদ্ধি করতেঃ নিয়মিত পুঁইশাক খাওয়ার ফলে শুক্রাণু সক্রিয়তা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। সবুজ শাক সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড, জিংক, আয়রন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা আমাদের শুক্রাণুকে সুস্থ সবল রাখতে সাহায্য করে।
অপকারিতা
পুই শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে। পুইশাকের উপকারিতা বেশি তবে সামান্য পরিমাণে এর অপকারিতা ও রয়েছে। নিচে এর অপকারিতা সম্পর্কে দেওয়া হলঃ
যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে পুঁইশাক খাওয়ার ফলে তাদের এলার্জি মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। পুঁইশাক অক্সালেট সমৃদ্ধ। যার ফলে এটি গ্রহণ করলে শরীরে তরল পদার্থের অক্সালেটের মাত্রা বেড়ে যায়। যার ফলে বিভিন্ন রকমের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এছাড়াও পুঁইশাকে পিউরির নামক উপাদান রয়েছে যা অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে শরীরে ইউরিক এসিড বৃদ্ধি পায়। যার ফলে গেটে বাত, কিডনিতে পাথর ইত্যাদি রোগ দেখা দিতে পারে। যারা পিত্তথলির বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া পুঁইশাক খাওয়া উচিত নয়।
পুইশাকের বিচির উপকারিতা
পুই শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা যেমন রয়েছে তেমনি পুঁইশাকের বিচির উপকারিতা ও রয়েছে। নিচে পুইশাকের বিচি উপকারিতা সম্পর্কে দেওয়া হলঃ
পুইশাক এবং পুইশাকের বিচির বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা রয়েছে। পুইশাকের বিচিতে রয়েছে ঔষুধি গুন। পুই শাকের বিচি সবজি হিসেবে খেলে শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধি সেরে যাবে। পুইশাকের বিচিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। তাই পুইশাকের বীজ নিয়মিত খেলে রক্তে ফ্যাট বাড়ার সংখ্যা কমে যায়।
যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য পুঁইশাকের বীজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা পুই শাকের বীজ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও পাকস্থলী কিংবা বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধে পুঁইশাকের বীজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পুইশাকের বিচিতে ফলিক এসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, আয়রন এবং জিংক রয়েছে, যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এটি কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকলে নীলচে কালো রঙের দেখায়। এই পুইশাকের বীজ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফলে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীরা স্বাভাবিকভাবেই পুই শাকের বীজ খেতে পারে।
পুইশাকের বীজ মূলত সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। এটি খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এতে রয়েছে ভেষজ গুন। পুঁইশাকের পাশাপাশি পুঁইশাকের বীজ আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী এবং নানা ওষুধের কাজ করে।
পুঁইশাক খেলে কি গ্যাস হয়
পুই শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। তবে পুঁইশাকের উপকারিতা অপকারিতার চেয়ে বেশি। আমাদের অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে পুঁইশাক খেলে কি গ্যাস হয়? এমন প্রশ্নের উত্তর নিচে দেওয়া হলঃ
বজ্র পদার্থের মাধ্যমে আমাদের শরীরের রোগ জীবাণু এবং ক্ষতিকর যৌগ শরীর থেকে বের হয়ে যায়। কোন কারনে সঠিকভাবে বজ্র নিষ্কাশন না হলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা যায়, যেমন-গ্যাস, বদহজম এবং এসিডিটি সহ অন্যান্য সমস্যা। আর এসব সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য পুঁইশাক একটি আদর্শ খাবার।
পুইশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আশ, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে দেহের বজ্র পদার্থ সুষ্ঠুভাবে নির্গমন করতে সাহায্য করে। এছাড়াও পুঁইশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি। যা আমাদের ত্বকের রোগ জীবাণু দূর করে এবং শরীরের বৃদ্ধিকে তরান্বিত করে। এছাড়াও আমাদের ত্বক এবং চুল ভালো রাখতে পুঁইশাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গর্ভাবস্থায় পুঁই শাক খাওয়া যাবে কি
আমরা জানি গর্ভাবস্থায় একজন মাকে সুষম খাদ্য প্রদান করতে হয়। তাহলে গর্ভাবস্থায় পুঁইশাক খাওয়া যাবে কি? যেহেতু পুইশাকের উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে। আসুন জেনে আসি গর্ভাবস্থায় পুঁইশাক খাওয়া যাবে কিনাঃ
গর্ভাবস্থায় মাকে লৌহ সমৃদ্ধ খাবার যেমন- (মাংস, ডিম, ডাল, কলিজা কাঁচা কলা, কচু শাক, লাল শাক, ডাটা শাক এবং পুইশাক) সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো উচিত। পুঁইশাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে যা একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই সমস্যা সমাধানে পুঁইশাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পুঁইশাকে কি কি ভিটামিন আছে
আমরা পুঁইশাকের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানব পুইশাকে কি কি ভিটামিন আছে সে সম্পর্কে। আসুন জেনে আসি পুঁইশাকের ভিটামিন সম্পর্কেঃ
পুইশাকে রয়েছে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি। এই ভিটামিন গুলো আমাদের ত্বকের রোগ জীবাণু দূর করে এবং শারীরিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়াও আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে এবং চুল মজবুত করতে সাহায্য করে। নিয়মিত পুইশাক খাওয়ার ফলে পায়েলস, ফিসটুলা এবং হেমোরয়েড হওয়ার আশঙ্কা অনেক কমে যায়।
এছাড়াও পুঁইশাকের প্রচুর পরিমাণে রয়েছে আঁশ বা ফাইবার। এই আস বা ফাইবার পাকস্থলীর ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
লেখকের মন্তব্য
আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমরা পুঁইশাকের উপকারিতা ও অপকারিতা, পুই শাকের বিচির উপকারিতা এবং পুঁইশাকের ভিটামিন সম্পর্কে জেনেছি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সুস্থ থাকার জন্য ভিটামিন সমৃদ্ধ শাকসবজি খাওয়া খুবই দরকার। আর এসব শাকসবজির মধ্যে পুঁইশাক অন্যতম। তাই আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত পুই শাক খাওয়া উচিত।
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ ধরে আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের পোস্টটি ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। এরকম তথ্যবহুল ও আপনার কাছে ভালো লাগা আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট টি বেশি বেশি ভিজিট করুন এবং শেয়ারের মাধ্যমে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url